চার স্কিম রেখে সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা জারি
চার শ্রেণিকে বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে চারটি পৃথক স্কিম রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে বিধিমালায় মোট ১৮টি ধারা রাখা হয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন বিধিমালায় পৃথক চারটি স্কিম রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম ও স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।
আরও পড়ুন- জীবিত প্রমাণের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন পেনশনাররা
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন- ২০২৩ এর আওতায় বিধিমালাকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা নামে অভিহিত করা হয়েছে। যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিধিমালার ধারা ৩ এর অধীনে স্কিমের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে-
(ক) প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য)
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক মাসিক ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাসী ব্যক্তি দেশে ফেরার পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারিবেন। তবে, পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন।
(খ) প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য)
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠানের মালিক মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ না করলে, সেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
(গ) সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য)
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ইত্যাদি শ্রেণির ব্যক্তি মাসিক ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
(ঘ) সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকগণের জন্য অংশ প্রদায়ক পেনশন)
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয়সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) মাসিক ১ হাজার চাঁদা প্রদান করে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক হাজার টাকার মধ্যে চাঁদাদাতা ৫০০ টাকা ও সরকারি অংশ ৫০০ টাকা হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও জানানো হয়, প্রতিটি স্কিমের বিপরীতে উল্লিখিত পরিমাণ চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে মাসিক পেনশনের (সম্ভাব্য) প্রাপ্যতা অর্জিত হবে।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়। বিলে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হচ্ছে- নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। এসব এমওইউর খসড়ার কাজ সমাপ্তির পথে। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কাজ হবে অনলাইনে।
পাসকৃত ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ অনুসারে- ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।
আরএম/এমজে