সাইবার নিরাপত্তা আইনে ভালো কিছু দেখছেন না ইফতেখারুজ্জামান
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম ও বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন এনে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে সরকারের নতুন আইন করতে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তবে পুরো বিষয়টিকে ‘লোক দেখানো’ বলেও মনে করছেন তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত পুরো ড্রাফট দেখিনি। তবে সাইবার নিরাপত্তা আইন যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রূপান্তর হয়, তাহলে এটা জনকল্যাণমুখি হবে না।
তার আশঙ্কা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরই নামান্তর হবে সাইবার নিরাপত্তা আইন।
তিনি আরও বলেন, আইনের খসড়াটি জনসন্মুখে যেন প্রকাশ করা হয়। আমরা সেজন্য অপেক্ষা করব। একই সঙ্গে আমরা প্রত্যাশা করব আইনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই খাতের বিশেষজ্ঞদের যেন সম্পৃক্ত করা হয়। মোদ্দাকথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো কিছু এই আইনের থাকার যৌক্তিকতা নেই। এ আইনটি হওয়া উচিত সাইবার অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সংক্রান্ত।
নতুন আইনে মানহানি মামলার জন্য কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা সাংবাদিকদের এক ধরনের খুশি করার মতো বিষয়। সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে আইন লঙ্ঘিত হলে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন রয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মধ্যে সেটা আসতে হবে কেন? পুরো বিষয়টিই এই আইনে আসার কথা নয়।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় দেশের আটটি ট্রাইবুনালে সাত হাজারেরও বেশি মামলা চলমান রয়েছে। তার পরিণতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আল মামুন রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে এই আইনে দেশের আটটি ট্রাইবুনালে সাত হাজারেরও বেশি মামলা চলমান রয়েছে। যখন তথ্য-প্রযুক্তি আইন বাতিল করা হলো তখনও প্রায় তিন হাজার মামলা চলমান ছিল। অনেকেই তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন যে মামলাগুলোর কী হবে?
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৬১ নম্বর ধারায় একটা সেভিং ক্লজ দেওয়া হয়, সেখানে বলা হয়, যে মামলাগুলো তথ্য-প্রযুক্তি আইনে চলমান আছে সেই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে এই আইনটা বিলুপ্ত হয়নি। অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তি আইনেই মামলাগুলো চলবে। একইভাবে নতুন যে সাইবার নিরাপত্তা আইন হচ্ছে সেখানেও এমন একটা সেভিং ক্লজ থাকবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাত হাজার মামলা এমনভাবে চলবে যাতে মনে হবে এই আইনটা বিলুপ্ত হয়নি। এতে করে বিচারিক আদালতে চলমান মামলাগুলোতে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না।
আজ সকালে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তন করে নতুন আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনটি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নামে প্রতিস্থাপিত হবে।
সভা শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তিত হয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন হয়েছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে যেসব ধারা ছিল, সেই ধারা রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জনগণের সরকার। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘মিসইউজ’ ও ‘অ্যাবিউজ’ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি আইনের মাধ্যমে। এখানে বহু ধারা সংশোধন হয়েছে। এটার আজ নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল নয়, পরিবর্তন হচ্ছে।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়।
আইনটিকে নিবর্তনমূলক আইন আখ্যা দিয়ে শুরু থেকেই তা বাতিলের দাবি জানিয়ে এসেছে আইনজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন।
তাদের দাবি, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাই বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলাকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
এ আইনের সমালোচকদের মতে, এ আইনে দায়ের হওয়া মামলার সবচেয়ে বিতর্কিত দুটি বিষয় হলো এখানে মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয় এবং আইনের বেশ কয়েকটি ধারা জামিন অযোগ্য।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মোট ৫৩ ধারার মধ্যে ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করা আছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিবর্তনের কথা আগেই জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ আইনের বহু ধারা নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে যুক্ত করা হবে। কিছু ধারায় বড় সংশোধনী আনা হবে।
আরএম/এনআর/এনএফ