কাস্টমস কমিশনার এনামুলের যত সম্পদ
ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাস্টমস ভ্যালুয়েশন অ্যান্ড ইন্টারনাল অডিট বিভাগের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৩১ জুলাই) সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে দায়ের করা দুদকের মামলার এজাহারে এনামুলের সম্পদের বেশ কিছু বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের ঢাকা, গাজীপুর ও ফেনীর ৬৪ স্থানে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া জীবন বিমা করপোরেশন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, ব্যাংকে এফডিআর ও নগদ জমা থাকার তথ্য পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তার ঢাকার বসুন্ধরার জি-ব্লকের ১৩ নম্বর রোডে ৩ কাঠা জমিতে ৯তলা বাড়ি, বনানীরর আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, কাকরাইলে আইরিশ নুরজাহান টাওয়ারে একটি কার পার্কিং ও ১৮৩৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট, কাকরাইল ভুইয়া ট্রেড সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ১ হাজার ৯০০ বর্গফুট ও পঞ্চম তলায় ৩ হাজর ৭০০ বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস, খিলক্ষেতে ৩৩ শতাংশ জমি, মোহাম্মদপুর সাড়া আফতাব টাওয়ারের চতুর্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় ৪ হাজার বর্গফুটের বাণিজ্যিক স্পেস ও কারপার্কিং, বনানী ২৮ নম্বর রোডের ১ নম্বর প্লটে একটি কার পার্কিং ও ২ হাজার ৪২৮ বর্গফুট ফ্ল্যাটের মালিকানা রয়েছে।
মামলার এজাহারে বাড্ডার কাঁঠালিয়া মৌজায় ৪ কাঠা জমি ও মোহাম্মদপুর বাবর রোডে ৯ হাজার বর্গফুট আয়তনের সারা সন্ধানী লাইফ টাওয়ারে তৃতীয় ও চতুর্থ তলার পুরো ফ্লোর ও আটটি কারপার্কিং স্পেস, বাণিজ্যিক স্পেস ক্রয়ের জন্য শ্যামলী স্কয়ার ৩৭ লাখ ও শ্যামলী সন্ধানী টাওয়ার ২২ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম, ফেনী ও গাজীপুরে অনেক জমি রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ৬৪টি স্থানে ফ্ল্যাট ও জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যার মূল্য ২১ কোটি ৫২ লাখ ৫৩ হাজার ১২ টাকা দেখানো হলেও বর্তমান বাজারমূল্য কয়েকগুণ বেশি।
অন্যদিকে আসামি এনামুল হক শেয়ার বাজার, মৎস্য প্রকল্প, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, সঞ্চয়পত্র, স্বর্ণালংকার, অন্যান্য বিনিয়োগ এবং ব্যাংক ও হাতে নগদসহ মোট ৫৮ লাখ ৩২ হাজার ৩১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।
স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ২২ কোটি ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩১ টাকার সম্পদ অর্জনের মধ্যে ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৮ টাকার ঋণ বাদ দিলে ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৩ টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
যা তিনি ১৯৯৩ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চাকরিকালীন নামে-বেনামে অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৬ টাকার বৈধ উৎস পাওয়া গেলেও ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০৭ টাকা মূল্যের সম্পদের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। এসব সম্পদ তিনি ঘুষ-দুর্নীতি মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা ভোগ দখলে রাখার অপরাধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
২০২২ সালের কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানীর রামপুরা ও আফতাব নগরসহ রাজধানীতে নামে-বেনামে জমি, ফ্ল্যাট ক্রয়সহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম দায়িত্ব দেয়।
আরএম/এসএম