কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে গণপরিবহনে?
দেশে ক্রমাগত বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এ কারণে সরকার গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে। ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে এ নির্দেশনা?
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলা গণপরিবহনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও অনেকেই মানছেন না অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা। বাসের ভেতরে সবার মুখে মাস্ক নেই, অনেকের মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বা দূরত্ব বজার রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। যাত্রীরা বলছেন, অফিস-আদালত, বাজার-ঘাট সবকিছু খোলা রেখে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার নির্দেশনা জারি অযৌক্তিক।
কিছু সড়কে দেখা গেছে অনেক পরিবহন অর্ধেক যাত্রী বহন করছে। তবে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কিছু বাসে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে আবার অতিরিক্ত যাত্রীও পরিবহন করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় বাস সংকটের কারণে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে ওঠার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যাত্রীরা।
এদিকে, প্রয়োজনের তুলনায় বাস কম থাকায় অনেকে সিএনজি বা রিকশায় করে অফিসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন সিএনজিচালকরা। অনেককে আবার পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
গণপরিবহনের যাত্রীরা বলছেন, ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে সড়কে দ্বিগুণ গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথবা কর্মস্থলে অর্ধেক লোকবল নিশ্চিত করা দরকার ছিল আগেই। কিন্তু সরকার এগুলো কিছুই না করে পরিবহনে যাত্রী সীমিত করে দিয়েছে। এখন মানুষ অফিসে যাবে কীভাবে? বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ গাদাগাদি করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
রাজধানীর কাকরাইল মোড় থেকে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন কর্মজীবী আতাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না করে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। মালিক তো আমার অফিস বন্ধ করে হোম অফিসের সিস্টেম চালু করেনি। আমরা ভাড়াও বেশি দিচ্ছি, আবার করোনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াতও করছি। একদিকে জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি, অন্যদিকে এখন আবার বাড়তি ভাড়া। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য এটি বাড়তি দুর্ভোগ।’
আরেক বাসে দাঁড়িয়ে আছেন রুহুল আমিন। মুখের মাস্ক থুতনিতে নেমে গেছে তার। কেন এভাবে মাস্ক পরেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসে উঠে দেখেন। চাইলেও ১০ মিনিটের বেশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে যাতায়াত করা সম্ভব নয়।’
আরেক গণপরিবহন ‘প্রভাতী বনশ্রী’র যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার নির্দেশনা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের সময় কী কী প্রয়োজন বা কী কী প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে তা যাচাই করেছে বলে আমার মনে হয় না। এমন চিন্তা করলে রাস্তায় বেশি গাড়ির ব্যবস্থা করত। অথবা অফিস-আদালত সীমিত পরিসরে চালু রাখার নির্দেশনা দেয়া হতো।
এএইচআর/এমএইচএস/জেএস