পশ্চিমা ১৩ মিশনকে ডেকে অসন্তোষ জানাল ঢাকা
ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেওয়ায় ১৩টি পশ্চিমা মিশনের দূত ও কূটনীতিকদের ডেকে অসন্তোষ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের জানানো হয়েছে, হুট করে বিবৃতি প্রদানের মতো আচরণে বাংলাদেশ অসন্তুষ্ট হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাকে বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হাজির হন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা। এছাড়া কানাডা, ডেনমার্ক ও সুইডেন দূতাবাসের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও আসেন।
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেওয়া পশ্চিমা মিশনের এসব কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
পরে এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকার যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল তাদের দূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা তাদের বলেছি ওই নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি। হিরো আলম সারাদিন সতীর্থদের সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্র অবাধে বিচরণ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হননি বা কোনো অভিযোগ করেননি। অন্য প্রার্থীরাও কোনো ধরনের সহিংসতা বা অন্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ করেননি।
তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে গুটিকয়েক দূত যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা কখনোই সারাদিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না বলে আমরা তাদের জানিয়েছি। বলেছি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নের বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯ জুলাই দূতদের বিবৃতি দেওয়ার অনেক আগেই অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরও এই দূতরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়। যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু তারা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়।
শাহরিয়ার আলম বলেন, যৌথ বিবৃতিটি ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা তাদের কূটনৈতিক আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দিয়ে গঠনমূলক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি এটাও সতর্ক করা হয়েছে যে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতা বর্জিত আচরণ কেবল পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে।
পশ্চিমা মিশনের দূত ও কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, তারা বলেছেন, আমাদের সহযোগিতা করতে এটা (বিবৃতি দেওয়া) করেছেন। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তারা এ বিবৃতি দেননি।
দূত ও কূটনীতিকদের ডাকার বিষয়টি তলব নয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে তাদের ডাকার বিষয়টি কোনোভাবেই তলব নয়। আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য ডেকেছি। তবে এ ঘটনায় জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়ককে ডাকা হয়েছিল, সেটা ছিল তলব। কেননা, জাতিসংঘের কাঠামো অনুযায়ী এ ধরনের বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কূটনীতিকদের সামনে যে বিষয়টি আমরা তুলে ধরেছি, সেটা তাদের স্ব স্ব দেশের ক্যাপিটালকেও জানানো হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্রিফিংয়ের একটি অংশে ঢাকা-১৭ আসনের বিজয়ী প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতও উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেছিলেন বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছেন।
এনআই/এসকেডি