ঢাকায় কাল বাস চলাচল নিয়ে শঙ্কা
‘ঢাকার রাস্তা থেকে হঠাৎ উধাও বাস’- গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এটি। রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সেদিন ছিল বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ।
সাত মাসের কিছু বেশি সময় পর আগামীকাল ঢাকায় ফের বড় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। গত বছর ঢাকা ও বিভিন্ন বিভাগে বিএনপির সমাবেশের আগে ধর্মঘট ডেকেছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। আগামীকালের সমাবেশের দিনেও তাই গণপরিবহন বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জনমনে।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন আফরোজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হলে আগেও দেখেছি রাজধানীতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমি নিশ্চিত, কালও বাস চলাচল বন্ধ থাকবে, ভোগান্তিতে থাকব আমরা সাধারণ যাত্রীরা।
তিনি বলেন, এই ভোগান্তি তো আর ছোটখাটো না। প্রথমত রাস্তা ছোট হয়ে আসে, রাস্তায় অনেক লোক থাকে। যে এলাকায় সমাবেশ হয় সেখান দিয়ে হেঁটেও রাস্তা পার হওয়া যায় না। তার ওপর রিকশা ও সিএনজি চালকরা পাগল হয়ে যায়। একশ টাকার ভাড়া তারা দুইশ টাকার নিচে কথাই বলে না। এই সমাবেশগুলো সাধারণ মানুষের সময়-অর্থ, সবই কেড়ে নেয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী এম এ আমিনুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সায়েন্সল্যাব থেকে নিয়মিত খিলক্ষেতের অফিসে যাই। পাবলিক বাসেই যাতায়াত। সাধারণ দিনেও জ্যাম ঠেলে যেতে এক-দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলে সেদিন সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। তবে তখন আমরা জিম্মি হয়ে যাই। কোনো বাইকও তখন সাড়ে ৩০০/৪০০ টাকার নিচে যেতে চায় না।
• শান্তি সমাবেশে জনসমুদ্রের ছক আওয়ামী লীগের
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল সমাবেশ, দেখবেন অঘোষিতভাবে গণপরিবহন বন্ধ। কত মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করবে। কত মানুষ ছোট ছোট যানবাহনের চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে, তার কোনো হিসাব নেই। এসব ভোগান্তি কোনো রাজনীতিবিদ দেখেন না। তারা শুধু আন্দোলন-সমাবেশ করেই ক্ষান্ত হন। এই শহরে মানুষ কাজের তাগিদে বের হয়, সুতরাং প্রতিটি মানুষের সময়ের মূল্য আছে।
এদিকে নিরাপত্তার অজুহাতে মালিকরা সড়কে বাস কম চালাতে পারেন বলে মনে করছেন পরিবহনগুলোর পরিচালকরা।
আর বাসচালকরা প্রশ্ন রাখছেন সড়কে বাস ও জীবনের নিরাপত্তা দেবে কে?
তারা যদি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন উপায়টা কী হবে
রাজধানীতে চলাচলকারী একটি পরিবহনের বাস চালক শামীমুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাস চালাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। তবে কোনো মালিকই চাইবে না, জেনেশুনে তার গাড়িটি বিপদে পড়ুক। আমরাও সেটা চাই না। নির্বাচনের সময় আসছে, আবার রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠছে। আগামীকাল দুটি বড় দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ। তারা যদি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন উপায়টা কী হবে। এজন্য মালিকরা এমন গ্যাঞ্জামের দিনে বাস রাস্তায় নামাতে চান না।
সাভার পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাড়ি বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু মালিকরা হয়তো রাস্তায় কম গাড়ি চালাবে। সেটা হতে পারে চার ভাগের এক ভাগ চলবে, বাকি তিন ভাগ বন্ধ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যাত্রীদের অসুবিধায় ফেলতে চাই না। কিন্তু যাত্রী পরিবহনের আগে আমাদের বাসের নিরাপত্তা আগে। ভরা সমাবেশের মধ্যে আমরা বাস চালালাম, কিন্তু কেউ বা কোনো পক্ষ বাসে আগুন দিল! আগুন দেওয়া বাস থেকে যাত্রীরা নামতে গিয়ে আহত হলো... এসবের দায়ভার কে নেবে? বাসের নিরাপত্তার স্বার্থে মালিকরা কম বাস বের করবে।
অন্যদিকে পরিবহন মালিক সমিতি ও ফেডারেশনের নেতারা বলেছেন, সাংগঠনিকভাবে বাস চলাচল বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তারা কোনো জনসমাবেশের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চান না।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাস চলাচলের সঙ্গে সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে মালিকরা বাস চালানো বন্ধ রাখতে পারে।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজনে করে শোভাযাত্রা, আরেকজনে করে পদযাত্রা। আমরা আছি শোভাযাত্রা আর পদযাত্রার মাঝামাঝি। আগে সারাদিনে চারটি ‘সিঙ্গেল’ ট্রিপ হতো। আর এখন হয় দুটি ‘সিঙ্গেল’। বাকি ২ সিঙ্গেল শোভাযাত্রা আর পদযাত্রায় খেয়ে দেয়। সুতরাং আগামীকাল যানজট হবে; আর অত্যাচার সব পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ওপর দিয়ে যাবে। ২০১৪-১৫ সালে গাড়ি পুড়ছে, ৯২ সালেও গাড়ি পুড়ছে। এর কোনো শাস্তিও নেই।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, যানবাহন বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই এবং এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তও আমাদের কাছে আসেনি। যানবাহন বন্ধ রেখে আমরা কোনো জনসভার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাই না। বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়াও না করে, গাড়ি চলাচলের পরিবেশ নষ্ট না করে তাহলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে বিএনপির পাশাপাশি আগামীকাল ‘ শান্তি সমাবেশ’ নামে কর্মসূচি রয়েছে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের।
অতীতে একইদিনে বড় দুই রাজনৈতিক দলের বড় কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর ঘটনার নজির রয়েছে। তাই আগামীকালের কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাতে কী হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে অনেকের।
• ‘জনভোগান্তি হলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে’
শান্তি সমাবেশে ক্ষমতাসীনরা জনসমুদ্রের প্রত্যাশা করছে। তিন সংগঠনের এ সমাবেশে কয়েক লাখ নেতাকর্মী জড়ো করার টার্গেট রয়েছে।
এখনও সমাবেশের অনুমতি মেলেনি
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ সমাবেশ করতে যাচ্ছে। এখনও সমাবেশের অনুমতি না পেলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ করতে চায় দলটি।
সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে আজ সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৯টি দলের আবেদন পেয়েছি তাদের সমাবেশ করার জন্য। আমরা পর্যালোচনা করে কয়েকটি পার্টিকে অনুমতি দেব। যারা অনুমতি পাবে তাদের রাজনৈতিক সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ওয়ার্কিং ডেতে বিশাল বিশাল জনসভা করে লাখ লাখ লোককে রাস্তায় আটকে রাখার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে, তারা যেন ভবিষ্যতে ওয়ার্কিং ডেতে না দিয়ে বন্ধের দিনগুলোতে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আর যারা সমাবেশে আসবেন তারা যেন লাঠিসোঁটা বা ব্যাগ না নিয়ে আসেন। আমি সব রাজনৈতিক দলকে বলব আপনারা সমাবেশ করেন কিন্তু জনগণকে কষ্ট না দিয়ে। হয়তো ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেলে আমাদের বাধ্য হয়ে এসব কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হতে পারে।
এমএইচএন/এনএফ