অতিরিক্ত কাজ করবে না রেলের রানিং স্টাফরা, শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা প্রদান বিষয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আবারও অতিরিক্ত কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এ ঘোষণা অনুযায়ী রোববার (২৩ জুলাই) সকাল থেকে তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। সরকারি নিয়ম মাফিক ৮ ঘণ্টা ডিউটি শেষে তারা বিশ্রামে যাবেন।
এদিকে রেলওয়ের রানিং স্টাফ সংকট থাকায় বিকেল থেকে ট্রেন বিলম্বে চলাসহ শিডিউল বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশনা না দিলেও আমাদের বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্থ বিভাগে যারা আছেন, তারা অবসরপ্রাপ্ত লোকো মাস্টারদের পেনশন বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে আমরা অতিরিক্ত ডিউটি করব না। আমরা স্বাভাবিক ডিউটিটাই করব ৮ ঘণ্টার।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী হেডকোয়ার্টারে আমাদের ৮ ঘণ্টার ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম করার কথা। কিন্তু রেলওয়ের যেহেতু কর্মী সংকট রয়েছে, সেজন্য আমরা ৭/৮ ঘণ্টা বিশ্রাম করেই আবার কাজে নেমে যেতাম। আমরা যারা রেলের কর্মী আছি, তারা রেলের স্বার্থে কাজ করতে চাই। কিন্তু রেলওয়ে আমাদের স্বার্থের বিষয়ে আন্তরিক না। এর প্রতিবাদে আমরা আর অতিরিক্ত ডিউটি করব না। আমরা হেডকোয়ার্টারে ১২ ঘণ্টা এবং হেডকোয়ার্টারের বাইরে ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম করব। এতে করে যদি ট্রেন চলাচল বিঘ্ন হয়, সেটার দায়ভার তো আর আমাদের না।
তিনি আরও বলেন, পেনশনে যে মাইলেজ সুবিধা পেতাম, সেটি অব্যাহত রাখতে হবে। এটা আমরা আইন অনুযায়ী আগে থেকে পেয়ে আসছিলাম। এটা বন্ধ করা যাবে না।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। তবে রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ও কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে মাইলেজ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।
২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।
মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকা, ধর্মঘটও পালন করেছেন রেল কর্মীরা। তবে রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ থেকে ফের কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
/এমএইচএন/এসএসএইচ/