রেলস্টেশনে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি এখনও উপেক্ষিত রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে। সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা-ই করছেন না রেলের যাত্রীরা। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলকসহ ট্রেন ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ১৮ নির্দেশনা জারি করলেও এর বাস্তবায়ন এখনও দেখা যায়নি স্টেশনগুলোতে।
ঢাকার মধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশনসহ কয়েকটি স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, শারীরিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না কাউন্টারগুলোতে। অনেকটা গায়ে গা লাগিয়েই টিকিট কাটছেন যাত্রীরা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকলেও তা স্প্রে করার জন্য নেই দায়িত্বরত কেউ।
হাত ধোয়ার জন্য সাবানসহ অন্যান্য উপরকরণও নেই স্টেশনগুলোতে। যাত্রীরাও পুরোপুরি উদাসীন স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে। প্লাটফর্ম ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের অনেকেই মাস্ক পরছেন না। মানছেন না সামাজিক দূরত্বও।
মাস্ক খুলে রাখা রহমান নামে এক যাত্রী ঢাকা পোস্টকে জানান, গরম লাগার কারণে মাস্ক খুলে রেখেছেন তিনি। রুবেল নামে আরেক যাত্রীর অভিযোগ, প্লাটফর্মে প্রবেশের আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের কোনো উদ্যোগ দেখেননি তিনি।
সুমন নামে বনলতা এক্সপ্রেসের এক যাত্রী জানান, স্টেশনে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার ও মানানোর কোনো তৎপরতা দেখেননি তিনি। স্টেশনে অপেক্ষারত আরেক যাত্রী হিমেল বলেন, কাউন্টারগুলোতে ভিড় ঠেলেই টিকিট কেটেছি, শারীরিক দূরত্ব মানানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
রাজশাহীগামী কমিউটার ট্রেনে দেখা যায়, শারীরিক দূরত্ব ছাড়াই বহন করা হচ্ছে যাত্রী। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ যাত্রীর মুখেই নেই মাস্ক। অনেকে আবার মাস্ক সঠিকভাবে না পরেই বসে আছেন। ট্রেনের ভেতরে হাঁচি-কাশি দেওয়ার ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। কমিউটার ট্রেনের কয়েকটি বগিতে ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে। বনলতা এক্সপ্রেসেও একই পরিস্থিতি, শারীরিক দূরত্ব ছাড়াই বসেছেন যাত্রীরা। মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও উদাসীন অনেক যাত্রী। স্টেশনে থাকা দোকানগুলোয় ভিড় করে কেনাকাটা করছেন যাত্রীরা।
স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে স্টেশনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৯ মার্চ রেলওয়ের নির্দেশনা পাওয়ার আগে থেকেই কাজ শুরু করা হয়েছে। যাত্রীদের তাপমাত্রা মনিটরিং করা হচ্ছে। যাদের তাপমাত্রা বেশি তাদের ট্রেনে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রীদের নিজ উদ্যোগেই তা ব্যবহার করতে হবে। হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে উঠানামা করেন। সবার হাতে স্যানিটাইজার প্রয়োগের জন্য বাড়তি জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যাত্রীদের নিজ উদ্যোগে সচেতন হতে হবে। হাত ধোয়ার সাবানসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হলেও স্টেশনের ছিন্নমূলরা এগুলো নিয়ে যাচ্ছে।
ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে রেলওয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ২৯ মার্চ রেলওয়ের নির্দেশনা জারির আগেই বিভিন্ন রুটের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। সেই যাত্রীরাই এখন পাশাপাশি সিটে যাত্রা করছেন। তবে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে শুধু বিজোড় সংখ্যার সিটের যাত্রীরাই ট্রেনে চলাচল করবেন। নির্দেশনা মেনে ট্রেনের মোট সিট সংখ্যার ৫০ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। ৫০ শতাংশ টিকিটের ২৫ শতাংশ কাউন্টার থেকে ও বাকি ২৫ শতাংশ অনলাইন থেকে কাটা যাচ্ছে। মাস্ক ছাড়া ট্রেনে উঠলে যাত্রীদের জরিমানার আওতায় আনাসহ প্রতিটি ট্রেনেই টিকিট চেকিং কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ২৫ মার্চ সব ট্রেন বন্ধের পর ৩১ মে আট জোড়া ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ২৮০টি ট্রেন চালু করা হয়। এরমধ্যে ৮৮টি লোকাল ও মেইল ট্রেন এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেনের শতভাগ টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকে স্টেশনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়ে পড়ে।
এসআর/আরএইচ