রোসাটমের ডিজি আসছেন বাংলাদেশে, যাবেন রূপপুরে

দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক (ডিজি) আলেক্সি লিখাচেভ। চলতি মাসের (জুলাই)শেষ প্রান্তিকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাতীরের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, রোসাটমের ডিজি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তার এ সফরকাল হবে জুলাইয়ের শেষ দুই দিন (৩০ ও ৩১ জুলাই)। এ সময় তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রোসাটমের মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছে। মস্কো ৮ জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যার সাক্ষাৎ চায়। ফিরতি কূটনৈতিক পত্রে ৩০ ও ৩১ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে রোসাটমের মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই সূত্র।
জানা গেছে, ৩০ জুলাই ঢাকায় আসবেন লিখাচেভ। পরদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশ সফরকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি দেখতে যাবেন লিখাচেভ।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে রাশিয়া থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নিউক্লিয়ার ফুয়েল আসা শুরু করবে। রোসাটমের মহাপরিচালকের এ সফরে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর আগে চলে আসা নিউক্লিয়ার ফুয়েলের সংরক্ষণ, কীভাবে এটি নিরাপত্তার সঙ্গে পাবনায় নিয়ে যাওয়া হবে; সে বিষয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা বা কর্মযজ্ঞ জানতে চাইবেন লিখাচেভ। এছাড়া তার সফরে রূপপুরের অগ্রগতি ও বর্তমান বৈশ্বিক চলমান সমস্যার মধ্যে কীভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি সাধন করা যায়, সেটিও আলোচনায় আসার আভাস পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের ১২ এপ্রিল রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণায় বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে মদদ দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল ঠিকাদার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমকে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে পড়তে পারে নিষেধাজ্ঞা— এমন বার্তাও দেয় ওয়াশিংটন।

রোসাটমের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে তখন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা শোনা যায়। তবে, ঢাকা ও মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রূপপুর প্রকল্পে কোনো প্রভাব ফেলবে না। অবশ্য রূপপুরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নানা উপায়ে চাপ দিচ্ছে। তবে এ অবস্থায়ও প্রকল্পটির কাজ থেমে নেই বলেও বার্তা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
রুশ সহায়তায় বাংলাদেশের প্রথম এ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোসাটমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন।

২০১৭ সালের নভেম্বরের শেষ প্রান্তে দেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেসময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন সশরীরে রূপপুরে উপস্থিত ছিলেন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। সেখানে অনুষ্ঠানের ফাকে রূপপুরের প্রকল্প কার্যালয়ে সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন লিখাচেভ।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবরে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রোসাটমের মহাপরিচালক।
এনআই/এমজে