ইসির ক্ষমতা কমায় ঝুঁকির মুখে পড়বে গণতন্ত্র : সুজন
জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস হয়েছে মঙ্গলবার (৪ জুলাই)। সংশোধনী বিলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সুজন বলছে, এতে করে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে পড়বে।
বুধবার (৫ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানায় সুজন।
সুজন জানায়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, গতকাল ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) যে সংশোধনী পাস করা হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। নাগরিক সংগঠন সুজন এর পক্ষ থেকে আমরা এ ধরনের উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং নির্বাচনে অনিয়ম ও বল প্রয়োগের মতো ঘটনায় নির্বাচনের দিন কোনো কেন্দ্র বা আসনের ভোট বন্ধ করাসহ তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন স্থগিত ও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, এ সংশোধনীর পর নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র ভোটের দিন কোনো অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে পারবে; ভোটের দিন ব্যতীত অন্য কোনো সময় নির্বাচন স্থগিত বা ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না।
সুজন মনে করে, এমনিতেই নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠনের কাছে আস্থা অর্জন করতে পারেনি। আরপিও’র এই সংশোধনী নির্বাচন কমিশনকে আরও আস্থার সংকটে ফেলবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে একটি ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে। এছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে কি না, তা নিয়ে আমরা যখন সংকটে নিমজ্জিত, তখন এ ধরনের একটি উদ্যোগ সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, যা কোনো সচেতন নাগরিকের কাম্য নয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা জানতে পেরেছি যে, নির্বাচন কমিশন থেকেই ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য একটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। অথচ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৯১ (ক) ধারায় বলা ছিল ‘কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি-প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করিতে সক্ষম হইবেন না, তাহা হইলে ইহা যে কোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমত, সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করিতে পারিবে।’
৯১ (কক) উপধারায় বলা হয়েছে ‘কোনো ভোটকেন্দ্র বা সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকার ফলাফল প্রকাশ স্থগিত করিতে পারিবে, যদি কমিশন নিশ্চিত হয় যে, সেই ভোট কেন্দ্র বা পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল বল প্রয়োগ, হুমকি, কারসাজি বা অন্যকোনো অসদাচরণ দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হইয়াছে এবং প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে দ্রুত তদন্ত শেষে সরকারি গেজেটে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল প্রকাশের নির্দেশনা দেবে অথবা নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রের বা পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন বাতিলপূর্বক নতুন করিয়া নির্বাচন করিতে পারিবে।’
এছাড়াও উচ্চ আদালতের রায়েও গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে প্রদান করা হয়েছে। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় যে, উল্লিখিত ধারা দুটিসহ উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন এই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হলো। এটা কি কোনো পাতানো খেলা?
গতকালের আরও একটি বিষয়ের সংশোধনীর দিকে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে সুজনের। তারা বলছে, বিষয়টি হলো পূর্বে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান থাকলেও এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। বিষয়টি মোটেও ইতিবাচক নয়; কেননা এতে ঋণ খেলাপিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব উল্লেখ করে সুজন আরও জানায়, এ দায়িত্ব পালন করতে হলে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করা সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে আমরা মনে করি।
এসআর/এসএম