বাস ভাড়া বাড়াতে পরিবহন মালিকদের চাপ, সন্ধ্যায় বৈঠক
>> অভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই বিআরটিএ-র
>> করোনায় এর আগেও বাড়ানো হয়েছিল ৬০ শতাংশ ভাড়া
>> বাস টার্মিনাল ও স্টপেজে থার্মাল স্ক্যানার বসানোর পরামর্শ
ঢাকায় প্রায় ছয় হাজার যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। হঠাৎ করে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় সরকার ১৮টি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে একটিতে গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ আসনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিবহন মালিকরা বলছেন, অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে তাদের লোকসান হবে। তাই ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেওয়ায় মালিকদের একটি অংশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ভাড়া বাড়ানোর চাপ দিচ্ছেন।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন খাতে লোকসান ঠেকাতে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। এ নিয়ে আলোচনা হবে।’
মহাখালী বাস টার্মিনালের সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাসের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে গত এক-দেড় মাসে। স্টিলশিটের দাম ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত বছর ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল, এবার আরও বেশি বাড়াতে হবে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান সন্ধ্যা ৬টায় সভা ডেকেছেন। আমিও সভায় যাব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আজ জরুরি সভা আহ্বান করেছি। এ সভায় ভাড়া নির্ধারণ বিষয়ে আমরা আলোচনা করব। গত বছর অর্ধেক সংখ্যক আসনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা জারির পর ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। ওই কাঠামো তো তৈরিই আছে।’
করোনার শুরুতে গত বছরের ২৬ মার্চ দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এর কয়েকদিন পরই বন্ধ ঘোষণা করা হয় গণপরিবহন। এ ছুটি ও গণপরিবহন বন্ধ অব্যাহত থাকে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সীমিত পরিসরে চালু হয় গণপরিবহন। তখনও ৫০ শতাংশ আসনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেসময় সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর নির্দেশনা দিলেও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা এর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় এবং যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা মানেননি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন যাত্রীরা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত বছরও বাসে অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দিকে ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হলেও পরে তা স্থবির হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এবার টিকিট ছাড়া বাস ও মিনিবাসে যাত্রী পরিবহন না করলে ভালো হবে। এতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য কমবে।
এ বিষয়ে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ (খোকন) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত বছর বাসে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়নি। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও বাস মালিকরা ঢাকায় ও ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে এর দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছেন। অভিযান কঠোর না হলে নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থাকবে।’
এ বিষয়ে বিআরটিএ-র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেব। তবে ১৩ জনের পদ থাকলেও আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম) আছেন মাত্র ১১ জন। এই সংকটের পরও আমরা যথাসম্ভব অভিযান চালাব।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণপরিবহন ব্যবহার সংক্রান্ত বিশেষ সতর্কতা প্রচারের পাশাপাশি গণপরিবহনকে জীবাণুমুক্ত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বাস টার্মিনাল ছাড়াও বাস স্টপেজে থার্মাল স্ক্যানার বসাতে হবে। এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি সিটিং সার্ভিসের বাস-মিনিবাসে আসনবিহীন যাত্রী বহন বন্ধ করতে হবে। এছাড়া রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলেও যাত্রীর হেলমেট ব্যবহার আপাতত বন্ধ রাখা উচিত।’
গত বছর বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৬০ শতাংশ
অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে করোনাকালে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে গত বছরের ৩১ মে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা ৩৪ এর ২-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে সরকার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরসহ) বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া নিম্নোক্তভাবে পুনর্নির্ধারণ করে।
এক্ষেত্রে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ৩ মে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত বিদ্যমান ভাড়ার (যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ১.৪২ টাকা) ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত বিদ্যমান ভাড়ার (ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার যথাক্রমে ১.৭০ টাকা ও ১.৬০ টাকা। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়ার বিদ্যমান হার ৭ টাকা ও ৫ টাকা) ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়।
অবশ্য বাড়ানো ভাড়া আদায়ের আদেশ পরে প্রত্যাহার করে আগের ভাড়া কার্যকরে নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্ত হলো- একজন যাত্রীকে বাস বা মিনিবাসের পাশাপাশি দুটি আসনের একটিতে বসিয়ে অপরটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের নিবন্ধন সনদে উল্লেখিত মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী এবং দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা যাবে না।
পিএসডি/এফআর/জেএস