তাণ্ডব চালানো কাউকে ছাড় দেব না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দেশে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য সরকার সবধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।
রোববার (২৮ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। ‘তাণ্ডব কি শুধুই হেফাজত করছে, নাকি অন্য কেউ করছে’— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তাদের যে রণকৌশল, বাঁশেরকেল্লা ইনভলভ (যুক্ত)…, এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় আগে যে জঙ্গি সংগঠনগুলো সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য প্রয়াস চালিয়েছিল তারাই নতুনভাবে এখানে সম্পৃক্ত হয়েছে। এটি আমাদের মনে হচ্ছে। সবগুলো বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। যে যেখানে থাকুক, আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’
জঙ্গি সংগঠন বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন— এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগেও আপনারা দেখেছেন, কিছু জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে মদতদাতা রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কিছু অদৃশ্য... যখন আমরা সুতা ধরে টান দিই, এসব জঙ্গি সংগঠনের নেতাগুলো আগে জামায়াত-শিবিরের নেতা ছিলেন বলে আমরা দেখেছি। হরকাতুল জিহাদ বলুন, আনসার-উল্লাহ বাংলা টিম বলুন, যেটাই বলুন, সবগুলোর মূল নেতৃত্ব এসেছে জামায়াত-শিবির থেকে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া সবসময়ই দুই দলে মারপিট করে। দুই গ্রাম, দুই দল সবসময়ই মারপিট করে। আজ কেন যে নিরীহ মানুষের বাড়িঘর পোড়াচ্ছে, সরকারি সম্পদ নষ্ট করছে! আমরা এর পেছনে যে কারণ অনুমান করছি, আগে জঙ্গিরা নাশকতার জন্য যে রকম প্রচেষ্টা নিয়েছিল সেই রকমও হতে পারে। জামায়াত-শিবির হতে পারে, বিএনপির লোকজন মদত দিতে পারে।’
কিন্তু হরতাল তো ডেকেছে হেফাজত— সাংবাদিকরা এমন প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, হেফাজত হরতাল ডেকেছে। এখন হেফাজতের ভেতরে যেগুলো দেখছি, অনেক উস্কানি আসছে। বিভিন্ন মহল থেকে ফেসবুকে…, সেগুলোর মাধ্যমে যদি খোঁজা যায় তাহলে দেখা যাবে তারা অন্য দলের, অন্য মতাদর্শের লোকজন। আমরা সবাইকেই দায়ী করছি, সবকিছু গুছিয়ে সাক্ষী-প্রমাণ নিয়ে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব।’
এতদিন সরকার নমনীয় ছিল কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কখনোই নমনীয় নয়। সরকার সবসময় ধৈর্যের পরিচয় দেয়। ধৈর্যটা নেওয়া হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন, ইতোমধ্যে কতগুলো নিরীহ মাদরাসার ছাত্র, মাদরাসায় যারা অধ্যয়ন করে এর ৭০ ভাগই নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের ঢাল হিসেবে নিয়ে ব্যবহার করা…, আমি মনে করি এটা তারা খুবই অন্যায় কাজ করছেন। ধর্মের নামে তাদের ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামানো হচ্ছে। এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাড়িঘর, প্রেসক্লাসবসহ মানবসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করা হচ্ছে। এ জাতীয় ক্ষয়ক্ষতিসহ সকল প্রকার উচ্ছৃঙ্খলতা বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্যথায় জনগণের জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘সরকার উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এতিম, ছোট ছোট শিশুদের রাস্তায় এনে বসিয়ে দিচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় তাদের সামনে রেখে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন, তারাই ভিকটিম হচ্ছে। আমরা এগুলোকে মনে করি নাশকতা, এগুলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।’
‘আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জানাচ্ছি, এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য। নতুন আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য সরকার সবধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেহেতু আমরা ধৈর্যসহকারে দেখছি, এখন নিশ্চয়ই আমরা তাদের প্রতিকার করব, এগুলো প্রতিহত করব, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
ফেসবুকসহ কিছু অ্যাপ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, কতদিন এটা থাকবে— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গতি কমানো হয়েছে কি না, আমি সেটা জানি না। তবে যান্ত্রিক কোনো অসুবিধা হতে পারে। বিটিআরসি বলতে পারবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (২৬ মার্চ) বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাদের। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্রের মৃত্যু হয়। এটিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হয়। সেখানেও সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। হামলা ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার হরতালের ডাক দেয় ইসলামি সংগঠনটি। হরতালে দেশব্যাপী হামলা, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
এসএইচআর/এফআর/এমএআর/এমএমজে