অবৈধভাবে ভূমি দখলে ২ বছরের জেল, একই শাস্তি সহযোগীদের
অবৈধভাবে ভূমি দখলে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অবৈধ দখলকারীকে সহায়তাকারীও পাবেন একই শাস্তি।
সোমবার (১৯ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন মিলেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এখানে ভূমির কতগুলো অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যেন নাগরিকরা নিজ-নিজ মালিকানাধীন ভূমির নিরবচ্ছিন্ন ভোগ-দখলে প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আইনটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এতে ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিরোধ, দমন ও প্রয়োজনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি এবং সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি সম্পর্কিত বিরোধ আদালতের বাইরে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
খসড়ায় শাস্তির প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অন্যের মালিকানাধীন ভূমি নিজের মালিকানাধীন ভূমি হিসেবে প্রকাশ করা, কোনো ভূমি সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করে তা অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, নিজ মালিকানাধীন ভূমির অতিরিক্ত ভূমি বা অন্যের মালিকানাধীন ভূমি জেনেশুনে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তি সেজে, জ্ঞাতসারে এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তিরূপে প্রতিস্থাপিত করে কিংবা কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি সেই ব্যক্তি থেকে ভিন্ন কোন ব্যক্তি বলে পরিচয় দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর বা সমর্পণ- এসব কাজ করলে সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
জালিয়াতি সংক্রান্ত বিষয়ে বলা আছে, কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করা, অন্য কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন করা, অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি পরিত্যাগ করতে বা চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করা, প্রতারণার জন্য মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুতকরণ, কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কর্তন করা, অন্য কোনোভাবে দলিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন করা ইত্যাদির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এসব অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এছাড়া অবৈধভাবে ভূমি দখল করলে সেটা দুই বছর, সরকারি স্বার্থযুক্ত এবং জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধভাবে ভরাট ও শ্রেণি পরিবর্তন ইত্যাদি করলে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান এ আইনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে কোনো আইন প্রয়োগে বাধা দিলে সেখানে দুই বছর, অপরাধ সংগঠন বা সহায়তা করা বা প্ররোচনা দিলে একই পরিমাণ সাজা দেওয়ার বিধান হয়েছে। খসড়ায় আর্থিক জরিমানার দণ্ড রাখা হয়নি।
ভূমি সংক্রান্ত নানা অপরাধে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন। এ বিষয়ে আইনে কিছু বলা আছে কি না? জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, সেজন্যই ওই অংশটুকু যোগ করা হয়েছে। যদি সহযোগী হিসেবে কাউকে পাওয়া যায়, একই পরিমাণ শাস্তি তিনিও পাবেন। এখানে কাউকে আলাদা করা হয়নি। এখানে বলা হয়নি সরকারি কর্মকর্তা হলে তিনি শাস্তি পাবেন না। বলা হচ্ছে এ কাজ যদি কারো সহযোগিতা নিয়ে করা হয়, সেখানে যদি তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে তিনিও ওই একই অপরাধে একই মাত্রায় দণ্ডিত হবেন।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ধরুন আপনি বিদেশে আছেন। আপনার জমি আরেকজন দখল করে ভোগ করা শুরু করল। আপনি কিছুই করতে পারছেন না। এখন এই আইন প্রয়োগ করে আপনি সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
এসএইচআর/কেএ