‘তামাক চাষ বৈশ্বিক পরিবেশগত ক্ষতির অন্যতম কারণ’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, তামাক চাষ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা বৈশ্বিক পরিবেশগত ক্ষতির অন্যতম কারণ। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে তামাক উৎপাদনের জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে উৎসাহিতকরণে প্রচারাভিযান ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব তামাক দিবস উপলক্ষ্যে ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিজিওনাল অ্যাডভাইজর অ্যালায়েন্স ফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টটেশন বাংলাদেশের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মোজাহারুল হক। তিনি বলেন, বর্তমানে তামাক একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে ১২৫ টিরও বেশি দেশে তামাক উৎপাদিত হয়। সারা বিশ্বে আনুমানিক ৪ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমিতে তামাক উৎপাদিত হয়। তামাক চাষাবাদের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সাধারণত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার ৯ শত ৭০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এ ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য উৎপাদনের জমিতে তামাক উৎপাদনের কারণে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে। এ আশঙ্কার দূরীকরণ ও খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রোধকল্পে এখনই তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
এএফআইবি'র যুগ্ম সমন্বয়ক ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, প্রতিবছর দেশে তামাক ব্যবহারের কারণে প্রায় ১ কোটি ৬২ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় ৪ লাখ লোক নানা অসুস্থতায় পঙ্গুত্বের শিকার হয়। এছাড়া প্রতিবছর তামাক ব্যবহারের ফলে ১২ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার জনিত প্রধান ৮ টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যার ফলে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজন সরকার কর্তৃক জন সাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, তামাক চাষ কোনো মৌলিক প্রয়োজনীয় বা পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনমূলক পণ্য নয়। এটি একটি প্রাণঘাতী ও সর্বগ্রাসী পণ্য। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (১) বর্ণিত আছে, জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন, এবং ১৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক উপকরণ এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও নিরাপদ খাদ্য, বিশুদ্ধ সুপেয় খাবার পানিসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি। অন্য দিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তামাকজাত পণ্য চাষ, উৎপাদন, বিপণন ইত্যাদির উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্যাট-এর সভাপতি আসলাম শিহির বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫ শত ৬০ কোটি টাকা। তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। অসংখ্য পরিবার চিকিৎসা ব্যয়ের অর্থ যোগাতে নিঃস্ব হয়ে যায়। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কোন বছর কতটুকু পরিমাণ কমানো হবে, কীভাবে কমানো হবে তা সুস্পষ্ট বলা হয়নি। কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮ তে তামাক পণ্যকে অর্থকরী ফসলের তালিকাভুক্তি করা হয়েছে। যা মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এনআই/এমএ