মেট্রোরেলের নিচে বনসাই লাগবে এই বর্ষায়, পরিবেশবিদদের ‘না’
গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় বলা হয় বর্ষাকালকে। বাংলা ক্যালেন্ডারের সেই বর্ষাকালের বাকি মাত্র ১০ দিন। এই বর্ষায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে মেট্রোরেলের নিচের পথের সড়কদ্বীপে বনসাই লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ প্রজাতির গাছ লাগানোকে ভালো চোখে দেখছেন না পরিবেশবিদরা।
তারা বলছেন, বনসাই না লাগিয়ে সেখানে দেশি ও মোটা পাতার গাছ লাগানো উচিত। এতে সৌন্দর্যও বৃদ্ধি হবে, তাপমাত্রা কমাতেও সহায়তা করবে।
বর্তমানে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে মেট্রোরেল। আগামী জুলাই থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনার কথা রয়েছে।
মেট্রোরেলের মোট ২০.১ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। এই পুরো পথের নিচের সড়কদ্বীপে বনসাই প্রজাতির গাছ লাগাতে যাচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের নিচের অংশের সড়কদ্বীপের মাটি গাছ লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু মেট্রোরেলের নিচের অংশে রোদ ও ছায়া দুটোই থাকে, সেই বিবেচনায় এখানে গাছ লাগানো হবে। বেশি রোদেও যেন গাছের কোনো ক্ষতি না হয় স্থায়ীভাবে এমন কিছু গাছ লাগানো হবে। যেগুলো খুব বেশি বড় হবে না, তবে দীর্ঘস্থায়ী হবে। এতে মেট্রোরেলের কোনো ক্ষতি হবে না, পরিবেশও অটুট থাকবে।
যেখানে রোদ বেশি থাকবে সেখানে রোদ-সহিষ্ণু এবং যেখানে ছায়া বেশি সেখানে ছায়া-সহিষ্ণু গাছ লাগানো হবে। ১২টি বনসাই প্রজাতির গাছ পুরো পথে লাগানো হবে। ইতোমধ্যে সেখানে মাটি প্রস্তুতের পাশাপাশি রোদ-ছায়ার অংশ পরিমাপ করা হচ্ছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার সড়কদ্বীপে লাগানো হয়েছে গন্ধরাজ, রাধাচূড়া, করবী, কদম, সোনালু, পাতাবাহার, কুর্চি, টগর, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন, হৈমন্তী এবং বকুল ফুলের গাছ। এর বাইরে বনসাই প্রজাতির গাছ লাগানোর প্রস্তুতি চলছে।
অবশ্য বনসাইয়ে বেশ আপত্তি তুলছেন ঢাকার পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন এটা প্রকৃতি-বিরুদ্ধ কাজ।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বনসাইকে কোনোভাবেই সাপোর্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। এই কনসেপ্ট হলো প্রকৃতিকে আবদ্ধ করে রাখা। বিশেষ প্রক্রিয়ায় এ গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে রাখা হয়, যা কোনো মানবিক বিষয় নয়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের যে আবহাওয়া তাতে বেশি পাতাওয়ালা গাছ দরকার। যেসব গাছের পাতা বেশি এবং পাতা মোটা সেসব গাছ প্রয়োজন। এ ধরনের গাছ তাপমাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে। আমাদের কয়েকটি সুযোগ তৈরি হয়েছে এসব গাছ রোপণের। এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলোতে এগুলো লাগানো যেতে পারে। এখানে গাছ লাগালে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে, দ্বিতীয়ত তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করবে। বনসাই না লাগিয়ে সেখানে আমাদের দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো দরকার। সেক্ষেত্রে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে মৃত্তিকার গুণাগুণ দেখে এই গাছগুলো রোপণ করতে হবে।
‘এছাড়া, বালি দিয়ে উর্বর করে সেখানে গাছ লাগালে কদিন পরে এগুলো মারা যাবে। ১৪ থেকে ১৫ ফিটের বেশি উচ্চতায় বাড়ে না, এরকম বহু গাছ আছে। এই বিষয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে সেসব গাছ লাগাতে পারে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ’, যোগ করেন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেট্রোরেলের শুরু থেকে আমাদের এই বনসাই লাগানোর পরিকল্পনা ছিল। আপনি জানেন বাংলাদেশে গাছ লাগানোর মৌসুম হলো জুলাই, আমরা সেটা মাথায় রেখেই কাজটি করব। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে গাছ লাগাব। যেন সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এমএইচএন/এমজে