যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সরকার চাপ অনুভব করছে না
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন নিয়ে সরকার চাপ অনুভব করছে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সচিবালয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন সব নাগরিকের জন্য সমান। এটা আলাদা কোনো দল বা ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়। আমার মনে হয় ভিসা প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন বিএনপির জন্যও প্রযোজ্য। তারা মানুষ পুড়িয়েছে, গণপরিবহনে আগুন দিয়েছে ও গর্ভবতী মায়ের অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখেছে। এগুলোর কারণে তাদের ভিসা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সরকার চাপ অনুভব করছে না।’
‘ইতোমধ্যে আমাদের সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে জানিয়েছে, ২০০৮ সালে একটি ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এর পরে জনগণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। তিনবার একটি দল ক্ষমতায় রয়েছে বলেই আমাদের নানামুখী উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে৷ আরও একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করতে হবে। অর্থনীতি, শিক্ষা, বাণিজ্য ও কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী যেকোনও মূল্যে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’
‘কেউ যদি নির্বাচনে না আসে সেটা তাদের বিষয়৷ তবে আমরা শেষ দিন পর্যন্ত চাইব বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। জনগণ, কূটনীতিক ও প্রশাসনসহ সবাইকে নিয়ে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘চীন এখন তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি৷ তারা আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। আমাদের বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট স্থাপনে ও কিছু ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ দিয়েও তারা সহায়তা করছে। চীনের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবসময় বলে থাকি আমরা সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলব। তবে সবসময় আমাদের জাতীয় স্বার্থই স্থায়ী। আমাদের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ঠিক রেখে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।’
কৃষিক্ষেত্রে চীনের সহায়তার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কৃষির যান্ত্রিকীকরণের দিকে এগোচ্ছি৷ প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি থেকে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করতে কাজ করছি। এসব নিয়ে চীনের সঙ্গে আমাদের কয়েকটি সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। আমরা ধান কাটার হারভেস্ট মেশিন, আধুনিক সেচ যন্ত্র ও উন্নত প্রযুক্তির অনেক যন্ত্র ব্যবহার করে কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছি।’
চীন বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণে আগ্রহী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের দেশে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ করতে আগ্রহী। এ পার্কে বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করা হবে। চীনের বড় বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে৷ এক্ষেত্রে একটি ফোকাল পয়েন্ট থাকবে। সেখানে আমাদের কর্মকর্তারাও যুক্ত থাকবেন৷ এটা খুবই ভালো প্রস্তাব বলে আমার মনে হয়েছে।’
‘অ্যাগ্রো প্রসেসিং নিয়েও তারা কাজ করতে আগ্রহী। আমাদের মাছ, মাংস, আম ও কাঁঠাল প্রসেসিং করে কীভাবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করা যায় সে বিষয়ে সহায়তা করতে আগ্রহী। একইসঙ্গে এসব পণ্যের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতেও তারা এগিয়ে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।’
রোহিঙ্গা সংকটে চীনা সহায়তা আসবে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি বাংলাদেশের পক্ষে ১০-১১ লাখ রোহিঙ্গার খাবার, বাসস্থান, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়াটা বেশি কঠিন। আমরা তাদের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি৷ চীনা রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’
বিরোধী দল ২০১৪ সালে নির্বাচন ব্যাহত করতে চেষ্টা চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বিভিন্ন সময়ে এই অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় এসে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলেছে।’
এমএম/কেএ