‘গায়ক নোবেলের সংশোধিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে’
গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সব কয়েকটি জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে স্বীকার করেছেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নোবেল জানিয়েছেন, তিনি সুস্থ, স্বাভাবিক ও ভালো জীবনে ফিরে আসতে চান।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, আদালত থেকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর গায়ক নোবেলকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি টাকা নিয়ে প্রোগ্রামে না যাওয়ার বিষয় থেকে শুরু করে স্ত্রীকে মারধরের বিষয়গুলো স্বীকার করেন। এছাড়া ডিবির কাছে তার নিয়মিত মাদক সেবনের কথা স্বীকার করেছেন।
রোববার (২১ মে) রাতে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোবেল মাদক সেবনসহ স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার বিষয়গুলো আমাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। অন্য অপরাধীদের সঙ্গে তার পার্থক্য হচ্ছে, তিনি একজন শিল্পী মানুষ। এ কারণে তার মধ্যে সংশোধিত বা ভালো হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে। আমরাও বোধ করি, তার মতো একজন গুণী মানুষ সংশোধিত হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য যদি সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করেন তাহলে অবশ্যই সেটা শুভ ব্যাপার। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কোনোটাই অস্বীকার করেনি তিনি বা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
গায়ক নোবেলকে কারা মাদক সাপ্লাই দিত এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য জানা গেছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তিনি যেসময় আমাদের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তখন মাদক সাপ্লাইয়ের বিষয়ে আমাদের বলেছেন। নোবেল যে মাদক গ্রহণ করতেন সেগুলো লাইসেন্স নিয়ে এ দেশে অন্য মানুষও গ্রহণ করেন। আমার জানা মতে, তাকেসহ তার মতো যুবকদের বগুড়ায় মাদকদ্রব্যের অসাধু কিছু লোক তাকে লাইসেন্স দিয়েছেন। শুধুমাত্র নেশা করার জন্য টাকার বিনিময়ে এ লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স ব্যবহার করে নোবেল মাদক কিনে সেবন করতেন। এতে তার কিছু সহযোগীও আছে এবং বগুড়ার কিছু মাদকদ্রব্যের কর্মকর্তা আছেন, যারা টাকা পেলেই লাইসেন্স বিক্রি করে দেন।
নোবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি টাকা নিয়ে প্রোগ্রামে না যাওয়ার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এছাড়া তার স্ত্রীকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন।
এদিকে স্বামীর জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে নোবেলের স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, রিমান্ডে নোবেল সবকিছুই স্বীকার করছেন এবং তার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছেন। বাকিটা আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই ঠিক হবে।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠানে না গিয়ে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৮ এপ্রিল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬ এর প্রথম পুনর্মিলনী আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য মাইনুল আহসান নোবেলের সঙ্গে মোট এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়। পরে নোবেলকে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তবে অনুষ্ঠানে না গিয়ে প্রতারণা করে এ অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি।
এমএসি/এফকে