সমবায় অধিদপ্তরে নিয়োগ দুর্নীতি, গালীবের বিরুদ্ধে আরেকটি অনুসন্ধান
আর্থিক সুবিধা নিয়ে সমবায় অধিদপ্তরে অবৈধভাবে লোকবল নিয়োগের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের তীর সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মাদ গালীব খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে গালীব খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। নতুন করে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ আসায় ওই তদন্তের সঙ্গে সংযুক্ত করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মাদ গালীব খান ও তার স্ত্রী ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে ট্রেড অপারেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট তানিয়া সুলতানা রাখির নামে প্রায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
স্বামী-স্ত্রীর নামে দালিলিক হিসাবে সম্পদের মূল্যমান মাত্র ৫ কোটি টাকা ধরা হলেও বাস্তব মূল্য কয়েক গুণ বেশি। মামলায় সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মাদ গালীব খানের বিরুদ্ধে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ২ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ও তার স্ত্রী ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে ট্রেড অপারেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট তানিয়া সুলতানা রাখির বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৫২০ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তানিয়া সুলতানা রাখির বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি নিজ নামে ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫৪ শতাংশ জমি, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ৩.৫০ কাঠা জমি, বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে সাড়ে ৩ কাঠার প্লট এবং ধানমন্ডির ৭নং রোডের অ্যালায়েন্স প্রপার্টিজ লিমিটেড থেকে কেনা একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে দালিলিক হিসাবে ১ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
অন্যদিকে রাখির নামে বিভিন্ন সময়ে চালু করা এফডিআর, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, নিজ নামে বিভিন্ন ব্যাংকে চালু করা সেভিংস ও চলতি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা, গাড়ি কেনাসহ মোট ৬ কোটি ২৪ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে ৭ কোটি ২৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেলেও ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৫২০ টাকার সম্পদের স্বপক্ষে কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
তার স্বামী সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মাদ গালীব খানের বিরুদ্ধে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ২ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে মুহাম্মাদ গালীব খানের নিজ নামে রাজধানীর খিলগাঁও, মেরাদিয়ায় ১৪১৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও ফরিদপুরে ৬২ শতাংশ জমিসহ ৩৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকায় স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া তার নামে এফডিআর ও সঞ্চয় হিসাবসহ মোট ২ কোটি ৪১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পায় দুদক। অনুসন্ধানকালে মুহাম্মাদ গালীব খানের নামে শেয়ার বিনিয়োগ পাওয়া যায় ১ কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ওই টাকাসহ ২ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
আরএম/এসএসএইচ/