জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নতুন সংকট তৈরি করছে
অভিবাসন বর্তমানে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অভিবাসনের জন্য মূলত পুশ ফ্যাক্টর ও পুল ফ্যাক্টর দায়ী। তাছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নতুন সংকট তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতেও ফোর্সড মাইগ্রেন্টের (অভিবাসনে বাধ্য) সংখ্যা বাড়াবে।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনডিউসড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ : টেকিং অ্যা হিউম্যান রাইটস বেজড অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক।
তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন কারণে অভিবাসনে বাধ্য হন, তাদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের মানবাধিকার যেভাবে রক্ষা হয়, সেভাবে তাদের সক্ষম করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ডেল্টা প্ল্যান হাতে নিয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, এটি গ্লোবাল ইস্যু। সরকারি, বেসরকারি এবং সুশীল সমাজের সবার সঙ্গে আলোচনা করে গবেষণাধর্মী তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একমত হয়ে আমরা কপ সম্মেলনসহ সব আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ বিষয়টি তুলে ধরতে পারি, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টি সমাধানের পথ প্রশস্ত হয়।
সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ) মো. মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী ধরনের অভিবাসন হচ্ছে, তা নিয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত এনজিও প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। সরকার থেকে বাস্তুচ্যুতদের ঋণ দেওয়া হয়, তবে অনেকে ঋণ নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। যৌথ প্রয়াসে আমাদেরকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, আমাদের গবেষণা ও আজকের আলোচনায় অভিযোজন, প্রশমন, জীবিকা, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি ব্যক্তিক ও সামষ্টিক পর্যায়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটাতে। একটি সমন্বিত উদ্যোগ ও রোডম্যাপ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। আমাদের উন্নয়ন যেন পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য হুমকির কারণ না হয়ে ওঠে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নিয়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ ও ঢাকা জেলায় পরিচালিত গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের জীবিকাই অভিবাসনের মূল কারণ। দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া জীবিকা ও অর্থনীতি এর একটি বড় কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো বর্ডার নেই। মানুষ বাস্তুচ্যূত হওয়ার পর অভিবাসী হওয়ার মাঝে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে। তারপর ধীরে ধীরে একটি বড় অংশ অভিবাসনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি জীবিকা, ঋণগ্রস্ততা, দক্ষতাহীনতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, উচ্ছেদ ইত্যাদিও অভিবাসনের বড় কারণ।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসনের বড় সংখ্যার কারণ সংঘর্ষ নয়। এর চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষ বেশি অভিবাসিত হচ্ছে। ছোট ছোট শহর থেকে বাধ্য হয়ে মানুষ বড় শহরে বা দেশে অভিবাসিত হচ্ছে। ২০৩১ সালের মধ্যে ২ কোটির বেশি মানুষ অভিবাসী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেমিনারে আরও যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান, অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প সমন্বয়ক জেসিকা ফেলারিও, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী, ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, ইউএন উইম্যানের জেন্ডার সমন্বয়ক দিলরুবা হায়দার প্রমুখ।
এমএইচএন/আরএইচ