পুলিশের সম্মান নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি না খেলে
পুলিশের কোনো সদস্য বা কর্মকর্তার অন্যায়-অনিয়মের জন্য বাহিনীর সুনাম যেন ক্ষুণ্ন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
তিনি বলেন, পুলিশের সম্মান নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি না খেলে। ইউনিফর্ম পরে কেউ এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে ৩২ হাজার ফোর্সের সম্মানহানি ঘটে। পুলিশ আমার ইউনিফর্ম দিয়েছে, মর্যাদা দিয়েছে। সেই মর্যাদা কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেব না।
নিউমার্কেট অগ্নিদুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের ভালো ও মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
>> হিরো হতে চাইনি, ব্যবসায়ীদের চোখের পানির মূল্য দিতে চেয়েছি
মঙ্গলবার (২ মে) বেলা ১১টায় রাজারবাগ শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ডিএমপির পক্ষ থেকে ৩৩ পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তবে কখনো পুলিশ হারেনি, ১৯৭১ সালেও পুলিশ হারেনি, ভবিষ্যতেও হারবে না। ১৯৭১ সাল থেকেই পুলিশ জনগণের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
তিনি বলেন, স্বাধীন মাতৃকার জন্য পুলিশ সদস্যরা প্রথম বুক পেতে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় পুলিশ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পালিয়ে যেতে পারতেন, তিনি কিন্তু পালিয়ে যাননি, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি জীবন দিয়েছেন।
২০১২/১৩ সালে আগুন সন্ত্রাসের সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা নির্যাতন চালানো হয়েছে, পুড়িয়ে মারা হয়েছে। রাজশাহীতে হেলমেট দিয়ে থেঁতলে পুলিশ সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময়ও পুলিশ পিছু হটেনি। দেশমাতৃকা রক্ষা করেছে। ২০১৫-১৬ সালের দিকে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। হলি আর্টিসান হামলায়, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ছিল টার্গেট। তখনও পুলিশ পিছপা হয়নি। বিশ্বব্যাপী পুলিশ যে কাজটা করতে পারেনি, বাংলাদেশ পুলিশ কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে, বলেন তিনি।
করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, বাবা ছেলের লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছিল, দাফন করার মানুষ মিলছিল না, তখন পুলিশই দাফন কাফনের কাজ করেছে। মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিউমার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ যে মানবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, যে মানবিক কাজটি করেছেন তা নতুন কিছু নয়। তা পুলিশের দায়িত্ব মাত্র। ১৯৭১ সাল থেকেই পুলিশ সদস্যরা যেকোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে পারে। এর প্রমাণ নিউ মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
তিনি বলেন, আমরা সিনিয়র অফিসার, আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। আমার পুলিশ, আমার সহকর্মীদের উৎসাহিত করা, অনুপ্রেরণা, সাহস দেওয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব-কর্তব্য। কারণ তারা দেশমাতৃকা রক্ষা সদা জাগ্রত। মুখে বাঁশি বাজানো, মাথায় বিশাল কাপড়ের বস্তা নিয়ে বের হওয়ার ছবি সারা দেশে ভাইরাল হয়েছে। এটা বাংলাদেশ তথা ডিএমপির মর্যাদা অনেক দূর নিয়ে গেছে।
>> গোলযোগ তো আপনারা করছেন, আইজিপিকে ফখরুল
ডিএমপির সদস্যরা যা করেছেন তা পুরস্কার দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়। তবে ভালো কাজের স্বীকৃতি এটি। এটি ম্যাসেজ। বাকি সদস্যরা যেন এটা বোঝেন, উৎসাহিত হোন। পুলিশ সদস্যরা ভবিষ্যতে যারাই ভাল কাজ করবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশের অবদান অনেক সম্মানিত নাগরিক অনুধাবন করতে পারেন না। আমরা কষ্ট পাই, দুঃখ পাই। কারণ চামড়াপোড়া গরমে পুলিশ সদস্যরা সারাদিন ডিউটি করেন। কিন্তু কোনো ট্রাফিক পুলিশ ট্রাক ড্রাইভারের কাছ থেকে কয় টাকা নেন তার নিউজ করেন, ছবি প্রকাশ করেন। সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করব, পুলিশ অনেক ভাল কাজ করেন, সেটি প্রচার করুন। পুলিশের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেন। জনগণ যেন বুঝতে পারে।
কমিশনার বলেন, ডিএমপির ৩২ হাজার ফোর্সের মধ্যে ২/১ বাদে বাকি সদস্যরা নগরবাসীর সেবাদানে নিয়োজিত ও আত্মত্যাগে প্রস্তুত। ২/১ সদস্যদের অপকর্মের, অন্যায়ের দায়-দায়িত্ব পুলিশ কখনোই গ্রহণ করবে না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যদি অন্যায় করে, পুলিশ বাহিনীর সম্মান মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়? এটা কি কেউ মেনে নেবেন? সমস্বরে উপস্থিত সদস্যরা বলেন, না কখনো মেনে নেব না।
কমিশনার বলেন, পুলিশের সম্মান নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি না খেলে। ইউনিফর্ম পড়ে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে ৩২ হাজার ফোর্সের সম্মানহানি ঘটে। ইউনিফর্মের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সাম্প্রতিক যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তারমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পুলিশ সদস্যদের মানবিক ভূমিকা। যখন ব্যবসায়ীদের কান্নাররোল পড়েছিল, তখন পুলিশের ভূমিকা শুধু দেশ নয় পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আমি সেসব মানবিক পুলিশ সদস্যদের প্রতি স্যালুট জানাই।
তিনি বলেন, আমি অনুপ্রাণিত। সামনে নির্বাচন। আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করব। আগুনের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, মতপার্থক্য ভুলে কাজ করতে হবে। আমরা যাই করি জনগণের জন্য কাজ করি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম (অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, নিউমার্কেটের আগুনের ঘটনার দিন যখন পায়ে হাঁটা যাচ্ছিল না, পানি জমেছে, তখন পুলিশ সদস্যদের বস্তার পর বস্তা মালামাল বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিপদের মুহূর্তে আমরা কতটা পাশে থাকি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশকে দেখে অন্যান্য বাহিনী কিন্তু বসে থাকেনি। তারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সহকর্মীদের যেকোনো শ্রমের মূল্য দিতে পুলিশ কমিশনার উন্মুখ। ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রিয়জন, কারো আত্মীয়-স্বজন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, পুলিশ সদস্যরা যেভাবে নিউমার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এগিয়ে এসেছিল তা অভূতপূর্ব। সেদিন যদি পুলিশ মানবিক পুলিশিংয়ের ভূমিকা না রাখতেন, তাহলে হয়তো আমরা আরেকটা বঙ্গবাজারের মতো ক্ষতিকর অগ্নিকাণ্ড দেখতাম।
সিরিজ অগ্নিকাণ্ড কিসের আলামত- এমন প্রশ্ন রেখে হেলাল বলেন, আমরা এই সিরিজ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখতে চাই না। মার্কেটে পাহারার ব্যবস্থা করেছি, পুলিশও সহযোগিতা করেছে। ঈদের পাঁচ দিনে কোথাও কোনো মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটেনি।
জেইউ/ওএফ