ব্যবসায় ভাটা, সহায়তার আশায় বঙ্গবাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী
প্রতি বছর ঈদের আগে দম ফেলার ফুরসত থাকত না বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের। পুরো বছর অপেক্ষায় থাকতেন এ সময়টার। কিন্তু এবার আগুন সব কেড়ে নিয়েছে তাদের। মুনাফা তো দূরে থাক কোনো রকম টিকে থাকার চেষ্টা তাদের।
গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধূলিসাৎ হয়ে যায় রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যেন ঈদের আগে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন এ জন্য তাদের অস্থায়ীভাবে দোকান পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। যা সেদিনই ব্যবসায়ীদের মোবাইলে পৌঁছে দেওয়া হয়।
তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অধিকাংশ দোকান মালিক-কর্মচারী প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদান পাননি।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে অস্থায়ী বঙ্গবাজার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, খাটে মালামাল নিয়ে দোকান সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তীব্র রোদ উপেক্ষা করতে মাথার উপর টাঙিয়েছেন ছাতা। তবে আগের মতো নেই ক্রেতা কোলাহল। ঈদ দরজায় কড়া নাড়লেও ক্রেতাদের দেখা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
কথা হয় ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিনের সঙ্গে। বঙ্গবাজারে ১৯০৪, ১৯০৫, ১৯০৬, ১৯০৭ মোট চারটি দোকান ছিল তার।সবগুলোই আগুনে পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, বাসায় কিছু মালামাল ছিল, আর কিছু টাকা ধারদেনা করে দোকান বসিয়েছি। আগে ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন বিক্রি হতো ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। আর এখন বিক্রি করি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। কাস্টমারও কম, যা আসে বেশিরভাগই সন্ধ্যার পর। মাল বেঁচে কোনোরকমে খরচ উঠাই। তেমন কোনো আর্থিক সহায়তা আমরা পেলাম না।শুনেছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য টাকা দিয়েছেন, তবে সেটা এখনো পাইনি।
রিয়াজ প্যান্ট হাউজের সত্ত্বাধিকারী মো. রিয়াজ হোসেন বলেন, বেচাবিক্রি একদমই নেই। কাস্টমার দাম শুনে চলে যায়। এখন লস দিয়ে তো বিক্রি করতে পারি না। দিনে সর্বোচ্চ চার-পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
আর্থিক সহায়তার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আগুন লাগার পরদিনই আমাদের নাম- ফোন নম্বর সব লিখে নিয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য আসলেও আমরা তেমন কিছু পাইনি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সাহায্য আমাদের কাছে আসেনি।
বিকল্প গার্মেন্টসের মালিক পাভেল হোসেন বলেন, ঈদের আগে একটু ব্যবসা করার জন্য দোকান নিয়ে বসেছি।অনেকেই টাকা না থাকায় মালামাল কিনে বসতে পারেনি। একসময় লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করলেও এখন অল্প কিছু টাকাই আমাদের জন্য অনেক। প্রধানমন্ত্রীর অনুদান কেউ কেউ পেলেও অধিকাংশরাই পায়নি। এছাড়া মালিক সমিতি থেকেও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।
ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের দোকান ছিল একটি। ১৮৭১ নম্বর সে দোকানটি আগুনে পুড়ে যায়। এতে তার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। আপাতত লাখ টাকার মালামাল নিয়ে চৌকি পেতে বসেছেন তিনি।
অনুদানের বিষয়ে তিনি বলেন, নানা রকম সংস্থা থেকে মালিক সমিতির কাছে সাহায্য এসেছে। তবে সেসব থেকে আমরা তেমন কিছু পাইনি। গতকাল বিদ্যানন্দ ১০০ জন দোকান মালিককে মোট ১ কোটি টাকা সাহায্য করেছে। কিন্তু এখানে দোকানি আছে ৫ হাজার, কর্মচারী প্রায় ৩০ হাজার। প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দের ৯ কোটি টাকা থেকে কয়েকজন দোকান কর্মচারী বিকাশে ২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী এখনো টাকা পাননি।ঈদ উপলক্ষ্যে ব্যবসা করতে বসেছি। ঈদের পর এ জায়গা নিয়ে কী হবে জানি না। কারণ ঈদের পর ডাল সিজন যায়।এ সময়টায় আমাদের আর্থিক সহায়তা অনেক বেশি প্রয়োজন।
কথা হয় টাকা পেয়েছেন এমন একজন ব্যবসায়ী সজীব আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার আমাদের বেশ কয়েকজনের বিকাশ পার্সোনাল নম্বরে ২৫ হাজার টাকা এসেছে। বিকাশ মার্চেন্টে বা নগদে কোনো টাকা আসেনি।
ওএফএ/এসকেডি