পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল : মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ নয় মাস ২২ দিন পর পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। অনুমতি অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা মেনে মোটরসাইকেল চালকদের এই সেতু পার হতে হবে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে যেকোনো সময়ই আবারও বন্ধ হতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোটরসাইকেল চালকদের এই সুযোগ।
সেতু বিভাগের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোটরসাইকেল চালকরা বলছেন, নিজেদের চলাচলের সুবিধার জন্যই তাদের নিয়মগুলো অবশ্যই মানতে হবে। এমনকি কোনো মোটরসাইকেল চালক যদি অন্য কাউকে নিয়ম ভঙ্গ করতে দেখে সেটিও প্রতিহত করা এখন নিজেদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
পদ্মা সেতুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোটরসাইকেলে সেতু পার হতে অন্তত ৪টি নিয়ম মানতেই হবে চালকদের। এসব নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো—
ক) সেতুর টোল প্রদান করা (১০০ টাকা, ওয়ান ওয়ে)
খ) সেতুর নির্দিষ্ট লেনে মোটরসাইকেল চালানো
গ) মোটরসাইকেলের গতি সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে রেখে চালানো
ঘ) মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী দুজনকেই মানসম্মত হেলমেট পরিধান করা
এছাড়া মোটরসাইকেল চালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সব নিয়ম মেনে চলতে হবে মোটরসাইকেল চালকদের।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন অর্থাৎ ২৬ জুন থেকে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। প্রথম দিনে ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ছিল প্রায় ২৭ হাজার। ওই দিন রাতে সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হন। এরপর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ।
তখন থেকে এই ২৯৫ দিনের মধ্যে একাধিকবার পদ্মা সেতু মোটরসাইকেল যোগে পারাপারের জন্য চালকরা একাধিকবার দাবি জানিয়েছেন। তবে প্রতেকবারই সে দাবি নাকচ করে দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
অবশেষে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দেন। পরে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলার কালামৃধা ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঢাকা থেকে নিয়মিত বাড়িতে যাতায়াত করি। আজ পদ্মা সেতুতে আবারও মোটরসাইকেল চলাচলের খবরে আমি আনন্দিত। কিন্তু আবার সংশয়ও কাজ করে, কখন না জানি আবার অনুমতি বাতিল করে দেয়। আমি মনে করি, সেতু কর্তৃপক্ষ দেওয়া নিয়ম সবার মেনে চলা উচিৎ। যারা এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করবে, অন্য বাইকারদের উচিত হবে তাদের প্রতিহত করা। কারণ, এটি আমাদের নিজেদের স্বার্থেই করতে হবে।
তিনি বলেন, এটি একেবারে ঈদের আগে না করে আরও আগে অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল। তাতে বাইকাররা অভ্যস্ত হতে পারতেন। এখন তো অনেক বাইকের একসঙ্গে চাপ পড়তে পারে।
ওই অঞ্চলের আরেক বাইকার মনিরুল ইসলাম বলেন, বহু প্রতিক্ষার পর এটি আবার চালু হয়েছে। আমাদের এই নিয়মগুলো অবশ্যই মানতে হবে। কিছু লোক নাও মানতে পারে। তাদের জন্য সুযোগটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে নিজেদের ভালোর জন্যই নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে পদ্মা সেতু দিয়ে সাময়িকভাবে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত টোল দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত টোলবুথ ও নির্ধারিত লেন ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নির্ধারিত লেন পরিবর্তন করা যাবে না। ওভারটেকও করা যাবে না। চালক ও আরোহীকে হেলমেটসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সেতুর ওপর দাঁড়ানো বা ছবি তোলা যাবে না। চালকসহ সর্বোচ্চ দুইজন মোটরসাইকেলে চড়তে পারবে।
এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতুতে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে মোটরসাইকলে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা সাময়িক সময়ের জন্য অনুমতি দিচ্ছি। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এটি চলবে। যদি বাইকাররা আইন না মানে, তবে এই নির্দেশনা বাতিল করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বাইকারদের আচরণের ওপর এটি নির্ভর করবে কতদিন এ সুবিধা থাকবে। আমরা তাদের জন্য নির্ধারিত একটা লেন রাখব। এটার মধ্যে থাকতে হবে, এর বাইরে যাওয়া যাবে না। সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে। নির্ধারিত টোল প্রদানসহ চালক ও আরোহী উভয়কেই হেলমেট পড়তে হবে এবং বিআরটিএর নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে মোটরসাইকেল চলবে। ২০ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। সেতুর বাম পাশে সার্ভিস লেন দিয়ে চলবে। কোনোভাবেই সার্ভিস লেনের বাইরে মূল সেতুতে মোটরসাইকেল আসতে পারবে না। নির্ধারিত হারে টোল প্রদান করতে হবে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি থাকবে ৬০ কিলোমিটার। গতি এর বেশি তোলা যাবে না। যদি নিয়ম না মানে তাহলে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে।
এমএইচএন/কেএ