মশা মারতে ড্রোনের পর এবার আনা হলো ব্যাঙ
‘মশা মারতে কামান দাগা’-প্রবাদের প্রচলন রয়েছে মানুষের মুখে মুখে। এ প্রবাদকে পুরোপুরি বাস্তবে রূপ না দিলেও, কাছাকাছিই হাঁটছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কামান না হলেও তারা মশা মারতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। ড্রোনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটিয়ে মশা মারতে চায় ডিএনসিসি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যখন ড্রোন ব্যবহারের সার্বিক দিক নিয়ে আরও বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মশা মারতে অভিনব এক পদ্ধতি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। মশা মারতে খাল, জলাশয়, নালা, ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয়ে সংস্থাটি ব্যাঙ ছাড়ছে। ডিএসসিসি মনে করছে, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যকে কাজে লাগিয়ে ব্যাঙগুলো পানিতে ভাসতে থাকা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। ফলে সেসব স্থানে মশা আর বংশবিস্তার করতে পারবে না।
এমন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা হয়েছে কয়েক হাজার ব্যাঙের পোনা। পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে ডিএসসিসির আওতাধীন খাল, জলাশয়, নালা ও ড্রেনে কয়েক হাজার ব্যাঙের পোনাও ছাড়া হয়েছে। এখন অপেক্ষা ব্যাঙগুলো বড় হয়ে ওঠার। বড় হয়ে উঠলে ব্যাঙ জলাশয়ে থাকা মশার লার্ভাগুলো খেয়ে ফেলবে। এর মাধ্যমে মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবে, এমনটাই ধারণা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের।
মশা নিধনে এর আগেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এমন কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০১৮ সালে রাজধানীর বিভিন্ন ড্রেনে গাপ্পি মাছ অবমুক্ত করেছিল দক্ষিণের জনগণের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। উদ্দেশ্য ছিল, গাপ্পি মাছ পানির ওপর ভেসে থাকা লার্ভা খেয়ে ফেলবে। অবশ্য গাপ্পি মাছ ছেড়ে তেমন সুফল পাওয়া যায়নি।
এরপর গত বছর লেকে বেশ কিছু হাঁস অবমুক্ত করা হয় একই লক্ষ্য নিয়ে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি লেকে যেন মশার বংশবিস্তার রোধ করা যায়, হাঁস ছাড়ার উদ্দেশ্য ছিল এমনটাই। কিন্তু হাঁস অবমুক্ত করেও মশার উপদ্রব কমানো যায়নি। এছাড়া বেশিরভাগ হাঁস ইতোমধ্যে হারিয়েও গেছে। এসব পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যকে কাজে লাগিয়েই এবার ব্যাঙ ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, মশা নিধনে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমাদের কাজও চলছে। জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা, নতুন ওষুধের ব্যবহারসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএসসিসির আওতাধীন খাল, জলাশয়, নালা ও ড্রেনে কয়েক হাজার ব্যাঙের পোনা ছাড়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ডিএসসিসির দশটি জোনে আমরা কয়েক হাজার ব্যাঙ ছেড়েছি। এর ফলাফল পেতে আমাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ব্যাঙগুলো যখন বড় হবে তখন তারা মশার লার্ভা খেতে সক্ষম হবে।
জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়ার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে আমরা ব্যাঙের কিছু পোনা ছেড়েছি। দোয়া করবেন, যেন ব্যাঙগুলো বেঁচে থাকে। ব্যাঙগুলো বড় হলে মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। এছাড়া একই উদ্দেশ্যে একটি পুকুরে আমরা রাজহাঁস এবং পাতিহাঁস ছাড়ব।
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, যে পানিতে কিউলেক্স মশা হচ্ছে সেই পানি খুবই দুষিত। এই দূষিত পানিতে ব্যাঙের বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর যদি অল্প কিছু সংখ্যক ব্যাঙ বেঁচেও যায়, তাহলে তারা খুব বেশি লার্ভা খেয়ে সুফল বয়ে আনতে পারবে না। এছাড়াও এটি কোনো স্থায়ী সমাধান হিসেবে কখনই কাজ করবে না।
এই কীটতত্ত্ববিদ আরও বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ডিএসসিসি যদি এটি করে থাকে তবে সেটার কার্যক্রম দেখা যেতে পারে। তবে একজন গবেষক হিসেবে আমি মনে করি, এই পদক্ষেপ খুব বেশি ভালো ফলাফল দিতে পারবে না।
এএসএস/আরএইচ