বিবিএসের তথ্যের মানে সন্তুষ্ট ৮৫.৬৭ শতাংশ মানুষ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের মান ভালো বলেছেন ৭২.৯৯ শতাংশ ব্যবহারকারী। এছাড়া খুব ভালো বলে মতামত জানিয়েছেন ১২.৬৭ শতাংশ। আর তথ্যের সার্বিক মান নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮৫.৬৭ শতাংশ সন্তুষ্ট ছিলেন।
বুধবার (১৫ মার্চ) আগারগাঁও বিবিএস মিলনায়তনে এক জরিপ প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
বিবিএস জানায়, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সংস্থাটির তথ্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বিবিএস থেকে সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সন্তুষ্টির মাত্রা বিবেচনায় সন্তুষ্টি জানিয়েছেন ৬৭.০৬ শতাংশ ব্যবহারকারী। তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬১.২২ শতাংশ বিবিএসের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন যা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। গত ২৪ মাসে প্রায় ৩৭.৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা ২-৫ বার বিবিএসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
‘ইউজার স্যাটিসফেকশন সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এমন প্রতিবেদন এই প্রথম প্রকাশ করল বিবিএস। বিবিএসের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ও প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি ও চাহিদার মাত্রা নিরূপণের জন্য প্রথমবারের মতো এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জরিপের ফল নিয়ে সংক্ষিপ্ত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন ‘এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট’র প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন। স্বাগত বক্তব্যে প্রকল্প পরিচালক জরিপের সার্বিক বিষয়ে সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
দিলদার হোসেন বলেন, বিবিএস প্রথমবারের মতো এ ধরনের জরিপ পরিচালনা করেছে। এ জরিপটির নমুনার আকার ছিল ৬০৯ জন। যার মধ্যে ৫৮০ জন উত্তরদাতার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, উত্তরদাতাদের ৭০.৫২ শতাংশ জনসংখ্যা, জনমিতি, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ইত্যাদি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন। উত্তরদাতাদের ৬৫ শতাংশ পরিসংখ্যানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আরও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। আর ৪২.১৪ শতাংশ প্রায়শই প্রত্যাশিত তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পেয়েছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, সামগ্রিকভাবে বিবিএসের প্রস্তুতকৃত তথ্য সরকারি পরিসংখ্যান শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের ৪৬.৫৭ শতাংশ নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা অনুসরণ করেননি। বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ব্যবহারকারীদের ৭০.০৯ শতাংশ বিবিএসের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সরকারি পরিসংখ্যানকে উপযোগী ও ১৭.০৯ শতাংশ খুবই উপযোগী হিসেবে মত প্রকাশ করেন।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জনসংখ্যা, জনমিতি, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যান, জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান ও দারিদ্র্য পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী যথাক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ৭৩.১৩ শতাংশ পরিসংখ্যান ব্যবহারকারী জনসংখ্যা, জনমিতি, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যানের যথার্থতার ব্যাপারে সন্তুষ্ট। সময়োচিত বিষয়ে তাদের ৬৯.৬১ শতাংশ জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানকে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন। আর ৭৯.৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানের প্রাসঙ্গিকতার ব্যাপারে সন্তুষ্টি জানান।
জরিপে উঠে এসেছে, তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানকারীদের বিবিএসের সঙ্গে যোগাযোগের প্রচলিত কারণগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট উপাত্ত অনুসন্ধানের হার ৫৮.০৭ শতাংশ। তাদের প্রায় ৭২.৫৬ শতাংশ এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেতে সমর্থ হয়েছেন বলে মত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ৫৭.৫৯ শতাংশ ব্যবহারকারী বিবিএসের ত্বরিত সন্তুষ্ট হলেও তাদের মধ্যে ৩৮.৭৪ শতাংশ আংশিক সন্তুষ্ট ছিলেন।
এই জরিপের ৫৮০ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৮৮.৯৭ শতাংশ জানান, তারা বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন কারণে বিবিএসের ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। পাশাপাশি তাদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা ওয়েবসাইটের এক্সেসিবিলিটি সম্পর্কে ভালো বা খুব ভালো বলে অভিমত দিয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা তথা বিবিএসকে অধিকতর লক্ষ্যভিত্তিক, সমন্বিত কার্যকর ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে সরকার পরিসংখ্যান আইন পাস করে। পাশাপাশি একই বছর জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থার উন্নয়নের রোডম্যাপ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ থেকে জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র গৃহীত হয়। এনএসডিএস বাস্তবায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিবিএস প্রথমবারের মতো ইউজার স্যাটিসফেকশন সার্ভে-২০২২ পরিচালনা করে। বিবিএসের তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ ও এনএসডিএসকে সামনে রেখেই যাবতীয় প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সঠিক পরিকল্পনার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সঠিক তথ্য-উপাত্ত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, এসডিজির সূচকসমূহ, অষ্টম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা, ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে সঠিক ও সময়োচিত পরিসংখ্যানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
এসআর/কেএ