ট্রেনের টিকিটে ছাপানো থাকবে ৪ যাত্রীর নাম!
আকাশপথের যাত্রীদের মতো রেলপথেও যাত্রী নিশ্চিত করতে টিকিটে নাম ছাপানোর ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বর্তমানে দিনে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে একটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে সর্বোচ্চ চারটি আসন কিনতে পারছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। কিন্তু ওই চার আসন সমৃদ্ধ একটি টিকিটে একজনেরই নাম ও এনআইডি ছাপানো হচ্ছে। অধিকতর যাত্রী নিশ্চিতের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি টিকিটেই চারটি আসনের বিপরীতে চার জনেরই নাম ও এনআইডি যুক্ত করার কথা ভাবছে। এ বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে রেল ভবনে আলোচনা চলছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতিতে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুর দিকে কোনো টিকিটপ্রত্যাশী সপ্তাহে দুইবারের বেশি টিকিট কিনতে পারতেন না। কিন্তু গত ১০ মার্চ থেকে সেই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে টিকিটপ্রত্যাশীরা চাহিদা মতো যতবার খুশি টিকিট কিনতে পারবেন, তবে এক স্টেশন থেকে দিনে একবারের বেশি টিকিট কিনতে পারবেন না।
অন্যদিকে, নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই অঞ্চলে মোট ১২টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) পাশাপাশি তাদের নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত আছে। বিনা টিকিটে ভ্রমণ, ভ্রমণকারীর এনআইডির সঙ্গে টিকিটে থাকা এনআইডির অমিল, কালোবাজার থেকে কেনা টিকিট প্রমাণিত হলেই ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। নতুন নিয়মে যাত্রীরা অভ্যস্ত হতে শুরু করলেও কিছু কিছু টিটিইদের বিরুদ্ধে ঠিকমতো টিকিট চেকিং না করার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন : রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাবে না : মন্ত্রী
নতুন ব্যবস্থার ১৩ দিন যেতে না যেতেই অনেক কালোবাজারিরা নিজের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চারটি আসন কিনে কালোবাজারে বিক্রি করছেন। ঠিকমতো চেকিং না করা এবং টিটিইদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে কালোবাজারিরা এটি করতে পারে বলে ধারণা করছেন যাত্রীরা। আর এই সমস্যার সমাধানে একটি টিকিটে ভ্রমণ করা চার আসনের যাত্রীরই নাম, এনআইডি ও ছবি যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, টিকিটপ্রত্যাশীদের কাছে ৪/৩/২ আসনের টিকিট কেনার সময় সহ-যাত্রীদের নাম ও এনআইডি জানতে চাওয়া হবে। সহ-যাত্রীর এনআইডি যদি রেলওয়ের সার্ভারে ভেরিফায়েড হয়ে থাকে, তবে সেটি ইনপুট দিলে অটোমেটিক টিকিটের সহ-যাত্রীর অংশে বসে যাবে। আর ভেরিফায়েড না থাকলে শুধু ইনপুট দিতে হবে। পরে টিকিট প্রিন্ট করার সময় সেটি প্রদর্শিত হবে, যা দেখে টিটিইরা পরিচয় শনাক্ত করতে পারবেন। এতে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ফ্যান গ্রুপে’ ১২ মার্চ রাত ১০টা ৩৩ মিনিটে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন এক পোস্টে লেখেন, ‘কালোবাজারি ভাইয়াদের জন্য শুভরাত্রি। আপনাদের জন্য টিকিটে চার জনের নাম, এনআইডি যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরও অনেক কিছুই আসছে আপনাদের জন্য। টিকিটে ছবিও যুক্ত হতে পারে। চেকিংও হবে। কারোই পার পাওয়ার উপায় নেই।’
আরও পড়ুন : রেলের টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে যুক্ত হচ্ছে ৩ সেবা
এ প্রসঙ্গে সোমবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় মাহবুব কবির মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি টিকিটে চার আসনের যাত্রীরই তথ্য রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। কারণ, বর্তমান টিকিটের সাইজে শুধু একজনের নাম ও এনআইডি প্রিন্ট করার জায়গা আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিট বিক্রির সহায়ক প্রতিষ্ঠান ‘সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি’ কর্তৃপক্ষের টিকিট সাইজের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে নতুন কিছু ইনপুট দেওয়ার আর জায়গা নেই। চুক্তির বাইরে গিয়ে টিকিটের সাইজ বড় করতে কিছুদিন সময় লাগবে। টিকিট লম্বায় বেড়ে গেলে কাগজ ও কালির খরচ বেড়ে যাবে। সেই টাকা কে দেবে? এটার জন্য রেলওয়ের বাজেটের ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করি, এটি বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি টিকিটে চারটি নাম-এনআইডি লেখার মতো জায়গা আছে কি না, টেকনিক্যালি এটা করা যাবে কি না এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানি না। তবে, কি করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
/এমএইচএন/এসএসএইচ/