অনেকেই মুখ দেখাতে দুর্ঘটনাস্থলে হাজির হন : মেয়র তাপস
দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট নন এমন অনেকেই ক্যামেরায় মুখ দেখাতে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে যান বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটে গেলে দায়িত্ব কার ওপর দিয়ে পার পাওয়া যাবে সেটা নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকি।
শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইবি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস : প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র তাপস বলেন, দুর্যোগ হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে উদ্ধার কর্মীরা যেতে পারেন না। কারণ, উৎসুক মানুষ সেলফি তোলার জন্য এতই ব্যস্ত থাকে যে সেখানে খালি করে উদ্ধার করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। এটা (উদ্ধার কাজ) কি ফায়ার সার্ভিস করবে? নাকি সিটি করপোরেশন, রেড ক্রিসেন্ট, র্যাব, পুলিশ করবে? এমনকি যাদের দায়িত্ব না তারাও সেখানে হাজির হয়ে যান। শুধু সাধারণ মানুষ না, কর্তৃপক্ষসহ। যে কর্তৃপক্ষের সেখানে কোনো দায়িত্বই নেই, সে কর্তৃপক্ষও সেখানে হাজির হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে আমরা চলছি। সবাই ক্যামেরা পেলে দুটো কথা বলতে পারলেই মনে করে দায়িত্ব হাসিল হয়ে গেল!
প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ভূমিকম্পের মতো অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে শিক্ষাকার্যক্রমেই গুরুত্ব দিতে হবে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, আমাদেরকে সমস্যার গভীরে যেতে হবে। হালকার ওপর দিয়ে হাঁটলে আর হবে না। আমাদের সব কর্তৃপক্ষের কাছে এখন পর্যাপ্ত যান-যন্ত্রপাতি দেওয়া আছে। দুর্যোগ হলে কোথা থেকে যান-যন্ত্রপাতি আসবে সেজন্য আমাদেরকে এখন আর অপেক্ষা করতে, বসে থাকতে হয় না। আমরা সেদিক থেকে অনেক দূর এগিয়েছি। এখন আমাদের করণীয় হবে, মূল সমস্যা অনুধাবন করে ঝুঁকি হ্রাসে শিক্ষাকার্যক্রমে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া। সেভাবেই আমাদের পেশাজীবীদের তৈরি করতে হবে। দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন করতে হবে এবং তা তদারকি করে, পরিপালন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষাকার্যক্রমে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ না করায় সবকিছুতেই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, যদি ভুল হয় তাহলে সংশোধন করে দেবেন। এ পর্যন্ত যত প্রকৌশলীকে (সিটি করপোরেশনে) নিয়োগের জন্য আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তারা আমাকে বলেছে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের পাঠ্যক্রমে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি আলাদা বিশেষায়িত শিক্ষা। শুধু রাস্তা নির্মাণ, নর্দমা নির্মাণের সঙ্গে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এক জিনিস নয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হয়, আমি মনে করি, প্রকৌশল শিক্ষায়ও তেমনি আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হওয়া উচিত। শুধু মাস্টার্স পর্যায়ে নয়, বিএসসি শেষ করে যেহেতু পেশাজীবী হচ্ছে, সুতরাং বিএসসি পর্যায়েই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে সে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। (গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে) আমরা দেখি, কোনো স্ট্রাকচারাল সলিউশন প্রয়োজন হলে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমরা সে জিনিসটা পাই না। ফলে আমাদের পরামর্শক নির্ভর হতে হয়। আমরা সবকিছুতেই এখন পরামর্শক নির্ভর। একটা সেতু নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে। একটা চারতলা ভবন নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে।
আইবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রনক আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইবির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল হুদা, আইইবির পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূর, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্ট বাংলাদেশের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্টের (রাজউক পার্ট) প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল লতিফ হেলালী এবং আইবির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিবলু প্রমুখ।
এএসএস/এসএসএইচ/