জনগণকে ভোট দেওয়া শেখাবে ইসি
আগামী ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদের সব পদের সাধারণ নির্বাচন ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদের উপনির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইভিএমের এই পরিপত্রের আলোকে আগামী ১০ ও ১১ মার্চ সাধারণ জনগণদের ভোট দেওয়া শেখাবে ইসি। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন।
আগামী ১৩ মার্চ মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর পাঁচগাঁও ইউপির সাধারণ নির্বাচন এবং ৪ নম্বর সাধারণ সদস্য পদ ও নরসিংদীর রায়পুরার মির্জারচর ইউপির চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ভোটগ্রহণ হবে ১৩ মার্চ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।
উপসচিব আতিয়ার রহমান জানান, ১৩ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচন উপলক্ষ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) কর্মকর্তারা সরেজমিন উপস্থিত থেকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সব প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবেন। এছাড়া, ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম কাস্টমাইজেশনসহ নির্বাচন উপযোগী করে যথাসময়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করবেন।
প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার
ইভিএম ব্যবহার যেহেতু একটি কারিগরি বিষয় এবং নতুন ধরনের ব্যবহার কার্যকারিতা রয়েছে সেজন্য সব প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের সুবিধার্থে ইভিএম ব্যবহার পদ্ধতিবিষয়ক নির্দেশিকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ : নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য দুই দিনব্যাপী এবং পোলিং অফিসারদের জন্য এক দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভোটারদের জন্য ভোটার শিক্ষণ : আগামী ১০ ও ১১ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দুই দিনব্যাপী ভোটারদের জন্য ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম আয়োজন করতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে ভোটার শিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। নির্বাচনী এলাকার সব ভোটারদের যাতে ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটদান পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারে, এ বিষয়ে পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মক ভোটিং : নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে সব সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার উপস্থিত থেকে নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। মক ভোটিং শেষে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার গণ ভোটে ব্যবহৃত ইভিএমগুলো সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে বুঝিয়ে দেবেন। অফিসাররা ভোটগ্রহণের দিন ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত ইভিএম এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম অফিসারের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
নিরাপত্তা সহকারে ইভিএমের পরিবহন, সংরক্ষণ ও কার্যকারিতা যাচাই করা : ইভিএমগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিধায় মেশিনগুলো সারিবদ্ধভাবে রেখে যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে পরিবহন করতে হবে। ভোটগ্রহণের আগের দিন অন্যান্য নির্বাচনী মালামালসহ বিভিন্ন প্রিজাইডিং অফিসারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ অবশ্যই সঠিকতা যাচাই করবেন। কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। রিটার্নিং অফিসার কন্ট্রোলরুমকে অভিহিত করে ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধন অথবা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কারিগরি দল গঠন : প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন করে কারিগরি সদস্য সহযোগিতা করবেন। এজন্য রিটার্নিং অফিসার তাদের প্রয়োজনে লজিস্টিক সাপোর্ট দেবেন। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণের জন্য ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করবেন।
মোবাইল কারিগরি টিম : নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো ও মাঠপর্যায়ের আইডিইএ (২য় পর্যায়) প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল কারিগরি টিম সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অবস্থান করবেন। ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সমস্যা আনুষঙ্গিক লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিত করবেন।
ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কার্ডের এবং প্রদত্ত পিন পাসওয়ার্ডের গোপনীয়তা রক্ষা : ইভিএমের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কার্ড এবং মেশিন চালু করার পিন পাসওয়ার্ড প্রিজাইডিং অফিসারকে সরবরাহ করা হবে। যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করে এবং এসব কার্ড এবং পাসওয়ার্ডের যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।
অতিরিক্ত অডিট ও পোলিং কার্ডের ব্যবহার : সুষ্ঠুভাবে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্দেশে কেন্দ্রে ব্যবহৃত অডিট কার্ড ও পোলিং কার্ডের একটি সামগ্রিক বেকআপ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকবে।
ইভিএম যাচাই করা : ভোটগ্রহণের আগের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের বিপরীতে ব্যালট ইউনিটে সঠিকভাবে প্রতীক সন্নিবেশিত আছে কিনা তা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে প্রিজাইডিং অফিসার যাচাই করবেন। যাচাই করে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করে সঠিক ব্যালট ইউনিট বুঝে নিতে।
ডেমো ভোটগ্রহণ : ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য সর্বদা গৃহীত ইভিএমগুলো ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টকে ভোটগ্রহণ প্রদর্শন করতে হবে। ডেমো ভোট গ্রহণের সময় ইভিএমগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সঠিক আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করতে হবে।
এসআর/এসএম