‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতিতে অভ্যস্ত হচ্ছেন যাত্রীরা
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতিতে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ১ মার্চ থেকে এ কর্যক্রম শুরু হয়। বিষয়টিকে ‘সাধুবাদ’ জানিয়েছেন যাত্রীরা। বেশির ভাগ যাত্রী নিয়ম মেনে এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট কাটছেন।
নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে রেলেওয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই অঞ্চলে মোট ১২টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। গত দুদিনে এসব টাস্কফোর্স এক হাজার ১৮২টি ঘটনায় তিন লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৪ টাকা ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করেছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বর্তমানে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে এ প্রক্রিয়া চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে সব লোকাল ট্রেনে এ সেবা চালু করা হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, অসতর্কতা থেকে ২/১টি ভুল ছাড়া প্রায় ৯৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ম মেনে টিকিট কাটছেন।
‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতি বাস্তবায়নের আগে এনআইডি দিয়ে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও রেলওয়ের সঙ্গে এনআইডি সার্ভারের সংযোগ ছিল না। ফলে অনেকে এর অপব্যবহার করেছেন। এক এনআইডি ব্যবহার করে বহু টিকিট সংগ্রহের নজিরও দেখা গেছে। পরে এসব টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে উচ্চ মূল্যে।
বর্তমানে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে হলে আগে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে। তারপর এনআইডি বা মোবাইল নম্বর দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। নতুন এ নিয়ম পুরোপুরি বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন রেলেওয়ের কর্মকর্তারা। এজন্য রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ছয়টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ছয়টি টাস্কফোর্স কাজ শুরু করেছে।
পূর্বাঞ্চলের ছয়টি টাস্কফোর্স গত ৫ মার্চ ছয়টি ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ৩৯১টি ঘটনায় এক লাখ ৪৩ হাজার ৬২০ টাকা ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করেছে। পরের দিন অর্থাৎ ৬ মার্চ ছয়টি ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ৪৩৪টি ঘটনায় ৯৫ হাজার ৮৬০ টাকা ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি টাস্কফোর্স গত ৫ মার্চ ছয়টি ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ২৪১টি ঘটনায় ৫২ হাজার ৬৯৪ টাকা ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করেছে। ৬ মার্চ ছয়টি ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ৫১৬টি ঘটনায় ৯৬ হাজার ৪৬০ টাকা ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করেছে।
নতুন নিয়ম যাত্রীরা কতটা মানছেন এবং টাস্কফোর্সের বাইরে যাত্রী সচেতনতায় আর কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ— এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা নতুন একটা সিস্টেম চালু করেছি। এটি এক দিনেই বাস্তবায়ন হবে, এমন আশা করা ঠিক নয়। এটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে। আমি ট্রেনগুলোতে দেখছি, এটি বাস্তবায়নের হার অনেক বেশি। আমরা যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
‘গতকাল রাতে আমি পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে ২০০টি টিকিট চেক করেছি। সবার টিকিটই এনআইডি কার্ড দিয়ে সংগ্রহ করা। অনেকে এনআইডি কার্ড আনতে ভুলে গেছেন, এ রকম দেখেছি ৫/৭ জনকে। এমনও দেখেছি অনেকের বাবার নামে, শ্যালকের নামে টিকিট সংগ্রহ করা। সাদৃশ্য দেখে বোঝা গেছে, এগুলো সত্যি। ত্রুটিগুলো আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে। নতুন নিয়মের প্রতি জনসমর্থন অন্তত ৯৫ শতাংশ। কিছু লোক আছে ঘাড়ত্যাড়া। তারা ৯৫ শতাংশের চাপে আর কথা বাড়ায় না। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে তারাও ঠিক হয়ে যাবেন।’
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এখনই কঠিন পদক্ষপে যাচ্ছি না। তবে ধীরে ধীরে আমরা শাস্তি ও জরিমানায় যাব।
এমএইচএন/জেএস