৫০ হাজার টাকার জন্য লোহাগাড়ার বৃদ্ধকে কুপিয়ে মেরেছিল দুই রোহিঙ্গা
ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। অল্প টাকার বিনিময়ে কাজের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ঘটনাটি।
পুলিশ জানিয়েছে, লোহাগাড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকার কৃষক আহম্মেদ কবিরকেও (৭৫) খুন করেছেন দুই রোহিঙ্গা যুবক। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার এক রোহিঙ্গা যুবক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এতে গৃহকর্তা আহম্মেদ কবিরের কাছে থাকা ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে দুই রোহিঙ্গা মিলে কীভাবে খুন করে, সে ঘটনাটি উঠে আসে।
জানা যায়, লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের বাইয়ার পাড়ার বাসিন্দা কৃষক আহম্মেদ কবির। তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে ধান ক্ষেতে সেচ দিতে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী ফকিরের বাপেরখীল পাহাড়ি গাছবাগানে লাকড়ি কাটতে যান। সন্ধ্যার পরও বাড়ি না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাহাড়ি গাছবাগানে গলা ও মাথার বিভিন্ন অংশে কাটা অবস্থায় আহম্মেদ কবিরের মরদেহ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ১৭ ফেব্রুয়ারি লোহাগাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঘটনার সময়ে দুজন ব্যক্তি নিহতের পাশে ছিলেন। পরে নম্বর দুটির অবস্থান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বলে শনাক্ত করা হয়। এ সূত্র ধরে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুবপালং মধুরছাড় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সেখান থেকে মো. আমিন (২৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় অভিযানের বিষয়ে টের পেয়ে ঘটনায় জড়িত সলিম (২৮) কৌশলে পালিয়ে যান।
পরে আজ (সোমবার) মো. আমিনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। এদিন তিনি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার কৌশিক আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন- তারা দুজন ঘটনার আনুমানিক ১০ থেকে ১২ দিন আগে লোহাগাড়া উপজেলায় আসে। তারা আহম্মেদ কবিরের পাশাপাশি বিভিন্ন বাড়িতে দৈনিক ৫০০ টাকার চুক্তিতে কাজ করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও লোহাগাড়া থানার এসআই শরীফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযুক্ত দুই রোহিঙ্গা সবশেষ আহম্মেদ কবিরের হয়ে কাজ করছিলেন। কাজ করার সময় তারা খেয়াল করেন আহম্মেদ কবিরের সঙ্গে প্রায় সময় নগদ টাকা থাকে। এই টাকার লোভে পড়ে ঘটনার দিন তারা বৃদ্ধ আহম্মেদ কবিরকে হত্যা করে এবং টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে দুজনকে শনাক্ত এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
দুই রোহিঙ্গা বাংলাদেশি সিম কোথায় পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই শরীফুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনার সময় দেখেছি- নিবন্ধিত সিম অবাধে বিক্রি হচ্ছে। যেগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে। একেকটি সিমের মূল্য নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা।
চট্টগ্রাম জেলার বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, লোহাগাড়া উপজেলায় আলোচিত হত্যাকাণ্ডের পর থেকে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে তদারকি করেছেন। সূত্রবিহীন মামলাটির দ্রুত রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরেক রোহিঙ্গা যুবককে গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এমআর/এমজে