আইন মন্ত্রণালয়ের সায়, ভোট বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি
অনিয়ম করে কেউ নির্বাচনে জয়ী হলে এবং সেই ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলেও তা বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির এই প্রস্তাবে সায়ও দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। তিনি জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ভোট বাতিলের ক্ষমতা সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় মিলেছে।
আরপিও সংশোধনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এই জেলা জজ বলেন, দুএকটা জায়গায় আরো চিন্তাভাবনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বলেছিল। তার মধ্যে একটা ছিল- ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ যে মেলে না, এতে ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারিত করা, এটা আমরাও চাচ্ছিলাম। আইনে এও চলে আসুক যে এক শতাংশের বেশি অ্যালাউ করা হবে না। উনারা (আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা) জানালেন যে- এটা বিধিমালা দিয়ে কাভার করা সম্ভব। এই একটা পয়েন্টে উনারা আপত্তি করেছিলেন।
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে- নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পরে অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। বন্ধ করাসহ অন্য উপায় অবলম্বনের জন্যই সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম। ফলাফল ঘোষণার পরেও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে। কিন্তু উনারা বললেন যে, ৯১ (ধারা) দিয়েই কাভার হচ্ছে। কিন্তু ৯১ (ধারা) দিয়ে আসলে কাভার হয় না, আমরা যতটুকু জানি। উনাদের যুক্তিটা তুলে ধরলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি জয়েন করার কিছুদিন পরেই একটা ফাইল আসলো। এতে দেখলাম যে ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে বোধহয় ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করেছিল। কিন্তু মাননীয় হাইকোর্ট বলে দিয়েছিলেন যে- গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। এজন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে এই প্রস্তাব করেছিলাম আমরা। উনারা জানতে চাইলে আমরা এই ঘটনাটির ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম।
‘তখন কোর্ট কমিশনের কাছে ব্যালট চাইল, কিন্তু এটি তো তখনও উদ্ধার হয় নাই। তো যেটা উদ্ধার হয় নাই, সেটা কীভাবে কোর্টকে দেবে। এক্ষেত্রে তো কমিশনের কিছু করার থাকে না। এই রকম পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত, যে ওই নির্বাচনটা বন্ধ করে দেওয়া যায়। কারণ যিনি ডিপ্রাইভড হয়েছেন বলে মনে করেন, তার তো ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। এই কারণে আমরা সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করেছি’, যোগ করেন এ কমিশনার।
রাশেদা সুলতানা বলেন, গেজেট হওয়ার পরে তো ট্রাইব্যুনাল। গেজেট হওয়ার আগে তো কেউ ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন না। যখন একজন হারবে, তিনি আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন, এটা উনার রাইট।
তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যারা বৈঠকে ছিলেন তারা আমাদের জাস্টিফিকেশনে খুশি। তারা বলছেন আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন কেবিনেটে যাবে। পাশ হবে সংসদে। এটাই উনারা পাঠাবেন। ভোটিংয়ে আর বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু কেবিনেট থেকে যখন সংসদে যাবে। তখন উনারা যদি মনে করেন কোনটা রাখবো, কোনটা রাখবো না, এতে তো কারোরই কিছু বলার নেই। এটা আইন মন্ত্রণালয়েরও প্র্যাকটিক্যালি কিছু করার থাকবে না।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, প্রত্যেকটা নির্বাচনে আমরা বলেই দেবো কত শতাংশ ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙুল নেই তাকে তো ভোট দেওয়ার সুযোগটা দিতে হবে। আর ১ শতাংশ একটি জাস্টিফাইড সংখ্যা। প্রতি নির্বাচনের আগে বিধি দ্বারা তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অতীতে নাকি ৫ শতাংশও দেওয়া হয়েছিল এমন অভিযোগ অনেকে করেন। কাজেই জাস্টিফাইড একটা সংখ্যা দিলে কেউ আর কিছু বলতে পারবে না। তাই আমরা ১ শতাংশ দিতে চেয়েছিলাম।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারবো। কমিশন যখন সার্কুলার দেয় সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারবো। আমরা সার্কুলার দিয়েই আগে করেছি। একটা পরিপত্র দিয়ে দিলেই হবে।
ভোটে সাংবাদিকদের দূরে রাখার বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, সাংবাদিকদের দূরে রাখতে চাই না। রংপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা আমরা দিইনি। কোথা থেকে যে হলো আমি নিজেও জানি না। হয়তো আগের কোনো নির্দেশনাই গেছে। সম্ভবত মটরসাইকেল চলাচলের বিষয়টি নিয়ে বিষয়টা শুরু হয়েছিল। তবে আমরা আপনাদের জন্য আরপিওতে ব্যবস্থা রাখছি। যন্ত্র-ফন্ত্র কেড়ে নিলে শাস্তির প্রস্তাব করেছি।
এসআর/এমজে