বেঁচে ফিরলেও সঙ্গী দুর্বিষহ জীবন
রোববার দুপুর ২টা। সাইরেন বাজিয়ে দ্রুতগতিতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) প্রবেশ করল একটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। জরুরি বিভাগের সামনে থামতেই স্ট্রেচারে করে রোগীকে নেওয়া হলো ভেতরে। স্বজনরা জানালেন, রোগীর নাম রাসেল মাহমুদ (২৮)। বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া। মোটরসাইকেলে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনি।
পায়ে মারাত্মক আঘাত ছিল রাসেলের। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানালেন, গোড়ালির নিচের অংশে গুরুতর জখম। চিকিৎসায় ভালো না হলে কেটে ফেলতেও হতে পারে। এমন ঘটনার সঙ্গে বেশ পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন (পঙ্গু হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সরা।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেন তার সিংহভাগই সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে। এসবের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে কাজের নিরাপদ পরিবেশের অভাবেও বহু মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এভাবে যারা স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করছেন তাদের আমৃত্যু বয়ে যেতে হচ্ছে ওই দুর্ঘটনার বোঝা।
প্রতি বছর দেশে কতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেন তার সঠিক হিসাব না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বছরে গড়ে ১৫ হাজার মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হন; যার অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে।
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াহিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পঙ্গুত্বের শিকার অধিকাংশ ব্যক্তিই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। চিকিৎসায় অনেকে সুস্থ হন, আবার অনেককে স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। সড়কপথে অধিকাংশ দুর্ঘটনাই বড় শহর ও মহাসড়কগুলোতে ঘটছে। পঙ্গুত্বের হার কমাতে হলে সড়ক নিরাপদ করতে হবে। আর সাধারণ মানুষকেও প্রচলিত আইন মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি পঙ্গু রোগীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ জনবল আরও বাড়াতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) প্রতিবেদন অনুসারে, গত তিন বছরে সড়কে প্রাণ গেছে প্রায় ১৪ হাজার ৬৩৫ জনের। আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ৪৪৩ জন। আহতদের মধ্যে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন কতজন সেই হিসাব কারও কাছেই নেই।
নিসচার প্রতিবেদন আরও বলছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে চার হাজার ৯২টি দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৮৫ জন আহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে চার হাজার ৭২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন ছয় হাজার ৯৫৩ জন। আহত রোগীদের অনেককেই বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব।
পঙ্গুত্বের হার কমিয়ে আনতে এখনই উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিলেন যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য অনতিবিলম্বে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই। সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদের আরও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অন্যান্য বিষয় যেমন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহতদের বিষয়ে ততটা গুরুত্ব প্রদান করে না। কিন্তু সরকারের উচিত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
‘সড়কে প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ব্যাপারটি কতটা ভয়াবহ, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬-১৭ জন মারা যাচ্ছেন, অসংখ্য মানুষ আহত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসাও পাচ্ছেন না আহতরা।’
আরএইচটি/এনএফ/এমএআর/