আশা ও সম্ভাবনার আলো জ্বালিয়ে হোপ ফেস্টিভ্যালের সমাপ্তি
কবিতা, গান, অংশগ্রহণমূলক নানা কর্মশালা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা, তাগা ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড, আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাদেশের শিক্ষার্থীদের সমবেত গান, নেমেসিস, আর্টসেল, নগর বাউল জেমসসহ মঞ্চে নানান উপস্থাপায় শেষ হলো তিনদিনব্যাপী ব্র্যাকের হোপ ফেস্টিভ্যাল।
হৃদয়ে বাংলাদেশ’, ‘সম্ভাবনার শক্তি’ ও ‘যে পৃথিবী আমরা গড়তে চাই’– এই তিনটি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছিল তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা।
বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা ৩০ পর্যন্ত চলেছে এই উৎসব। এই দিনের সব আয়োজনের কেন্দ্রে ছিল তারুণ্যের জয়গান। দিনটি শুরু হয় ব্র্যাক স্কুল, কিশোর উন্নয়ন ক্লাব, ব্র্যাক কুমন ও একমাত্রা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রদর্শিত কবিতা, গান ও নাচের পরিবেশনার মাধ্যমে।
উৎসবের শেষ দিনটিকে উৎসর্গ করা হয় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ও চেঞ্জ মেকারদের প্রতি, যারা নিজ নিজ প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটির সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয় তাদের।
তরুণ প্রজন্মের চেঞ্জ মেকারদের দেওয়া হয় ‘আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জ মেকারস অ্যাওয়ার্ড’ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩৫ বছরের কম বয়সী নারীদের প্রথমবারের মতো দেওয়া হয় ‘তাগা আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং প্রফেশনালস অ্যাওয়ার্ড’।
ছিল জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন কৌশল নিয়ে আলোচনা। ভাষার মাসে বিশ্বের সব মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্র্যাক ইউনিভারসিটির দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাষায় সংগীত পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের।
ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ বলেন, আমরা মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার, জ্ঞান, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার সুযোগ তৈরি করে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলি। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলা, যাতে সে নিজেই নিজের জীবন পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে পারেন। এশিয়া ও আফ্রিকায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের জীবনমান পরিবর্তনের লড়াইয়ে ব্র্যাকের অংশীদার হয়ে কাজ করছেন। আশা করি সমতাপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলার এই লড়াইয়ে আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।
সমাপনী বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ। সবশেষে নগর বাউল জেমসের জমকালো পরিবেশনায় উন্মাতাল হয়ে উঠে পুরো স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ।
গত অর্ধশতকে ছোট ছোট উদ্যোগ আর আশার আলোর মশাল জ্বেলে নিজেদের জীবন পাল্টে দিয়েছেন হাজারো মানুষ। তাদের গল্পগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা এবং শিক্ষা, আর্থিক ক্ষমতায়ন, নারী-পুরুষের সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন, ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আচরণ পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে শেষ হলো তিন দিনের এই বিপুল আয়োজন।
বাংলাদেশের হৃদয় হতে, সারা বিশ্বজুড়ে আশা জাগানোর ৫০ বছরের পথচলা আর বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা, সাহস ও এগিয়ে যাওয়ার শক্তিকে উদযাপন করতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব।
বাধা, বিপদ, দুর্যোগে বাংলাদেশের লড়াকু মানুষ থমকেছে, কিন্তু থামেনি। সীমাহীন সম্ভাবনায় খুঁজে নিয়েছে এগিয়ে যাবার পথ। এই উৎসবের মূল অনুপ্রেরণা ও আয়োজন ছিল তাদেরকে ঘিরেই। কোটি মানুষের জীবনের মোড় পরিবর্তনের উদাহরণ সবাইকে নিজ নিজ বাধা পেরিয়ে স্বপ্ন জয়ের অনুপ্রেরণা দেবে–এই আশা ব্র্যাকের।
ওএফএ/কেএ