বিমানের ২৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন
মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুই উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া এবং রি-ডেলিভারি পর্যন্ত ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী ও জিএমসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শিগগিরই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
অনুমোদিত মামলার আসামিরা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ফ্লাইট অপারেশন্স-এর সাবেক পরিচালক ক্যাপ্টেন ইনরাত আহমেদ, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল আলম সিদ্দিক (এস এ সিদ্দিক), মহা ব্যবস্থাপক (মুদ্রণও প্রকাশনা) আবদুর রহমান ফারুকী, সার্ভিসেস অ্যান্ড অডিটের সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (এমসিসিঅ্যান্ডএলএম) দেবেশ চৌধুরী, ক্যাবের কনসালটেন্ট গোলাম সারওয়ার ও ক্যাবের প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঞা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান (প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জি (স্ট্রাকচার) শরীফ রুহুল কুদ্দুস, ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, উপ মহাব্যবস্থাপক (এওসি, এসিপি) জিয়া আহমেদ, চিফ পার্সার (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইটপাসার মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কর্পোরেট (প্ল্যানিং) মো. আজাদ রহমান।
অন্য আসামিরা হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, উপপ্রধান প্রকৌশলী (অবসরপ্রাপ্ত) মো. শাহজাহান, ইঞ্জিনিয়ার অফিসার (অব.) জাহিদ হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক পরিকল্পনা ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক এসিপি আতাউর রহমান, চিফ পার্সার (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক (শাহিন), ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ারং সার্ভিসেস) গাজী মাহমুদ ইকবাল।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও।
উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারী কোম্পানি- উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। এতসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১১শ কোটি টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।
মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় গত বছরের ১ জুন অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক। দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্ব অভিযান চালানো হয়েছিল। মাঝে বদলিজনিত কারণে দুদক টিম পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমান উপপরিচালক আনোয়ারুল হকের নেতৃত্ব টিম গঠিত হয়।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিশরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে তদন্তের জন্য কার্যবিবরণীর অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে দুটি মিশরীয় এয়ারক্র্যাফট লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গঠিত সংসদীয় সাব কমিটির প্রতিবেদন, বিশেষ করে চুক্তিপত্র প্রণয়ন এবং যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ টিমের কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ থাকায় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ এসব বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।
আরএম/এসএম