গালফ এয়ারের পাইলটের মৃত্যু : ইউনাইটেড হসপিটালের প্রতিবাদ
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ইউসুফ হাসান আল হিন্দি (বিদেশি নাগরিক) নামে গালফ এয়ারের এক পাইলটের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ প্রতিবাদ জানায়।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত ১৪ ডিসেম্বর ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে মুমূর্ষু অবস্থায় মোহাম্মদ ইউসুফ আল হিন্দিকে (৬৩) তার সহকর্মীরা ইউনাইটেড হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসেন। তিনি অচেতন থাকায় তার সহকর্মীদের ভাষ্য মতে, তিনি এয়ারপোর্টে অচেতন হয়ে পড়ে যান এবং তার কার্ডিয়াক এরেস্ট বিবেচনা করে তাকে ৪/৫ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয়। ইউনাইটেড হসপিটালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা সেবা দেওয়ার পরও তার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে তাকে দ্রুত নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও গুরুতর অসুস্থ রোগী মোহাম্মদ ইউসুফ আল হিন্দি দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে মারা যান।
মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তার সহকর্মী খলিল আল আব্দুর রাজ্জাক ও আরেক সহকর্মী ইসা শাহর কাছে তার করোনারি এনজিওগ্রামের সিডি, ব্রেন সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট, চেস্ট এক্সরে ফিল্ম, ব্লাড রিপোর্ট সহ সব রিপোর্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ডিএমপি গুলশান থানা এবং জর্ডান অ্যাম্বাসিরসহ সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৫ ডিসেম্বর রাত ৯টায় তার সহকর্মী পারভেজ মাহমুদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়। আমরা মৃতের মাগফিরাত কামনা করছি।
ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর একজন ভদ্র মহিলা আমাদের কাছে মোহাম্মদ ইউসুফ আল হিন্দির বোন বলে নিজেকে পরিচয় দেন এবং ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ ও রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত মেডিকেল রেকর্ডস চান। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমরা তার পরিচয় এবং রোগীর সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রমাণসহ হাসপাতালের কাছে তথ্যাদি নেওয়ার জন্য আবেদন করতে অনুরোধ করি। এরপর তিনি আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এরপর আমরা আজ জানতে পারি তিনি আমাদের বিরুদ্ধে একটি প্রেস কনফারেন্স করেছেন, যা আমাদের ব্যথিত করেছে। এমনকি রোগীর ক্লিনিকাল অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতেও তিনি আপারগতা জানান। কিন্তু আজ তিনি দাবি করেছেন- ইউনাইটেড হসপিটাল ভুল চিকিৎসা দিয়েছে এবং চিকিৎসায় অবহেলা
করেছে, যা সম্পূর্ণ অসত্য ও মনগড়া। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ইউসুফ হাসান আল হিন্দির মৃত্যু অভিযোগ তোলেন তার বোন তালা এলহেনদি। ইউসুফের মৃত্যুর প্রায় দেড় মাস পর জর্ডান থেকে ঢাকায় আসেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তালা এলহেনদি বলেন, আমি একজন মার্কিন নাগরিক। কাজ করি ব্রিটিশ সরকারের হয়ে। আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় ভুল ও অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পেতে আমি বাংলাদেশে এসেছি।
ইউনাইটেড হাসপাতালে ইউসুফকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি দাবি করে তালা এলহেনদি বলেন, ভোর পৌনে ৬টায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে দ্বিতীয়বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এরপর তাকে ১০ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয়। রিটার্ন অব স্পনটেইনাস সার্কুলেশন (আরওএসসি) ও ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রামের (এসিজি) পর রিপোর্টে দেখা গেছে, তার একটি অংশ ফুলে গেছে। সকাল পৌনে ৭টায় তার তৃতীয়বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় এবং আরওএসসির সঙ্গে ১৫ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয়। বেলা সোয়া ১১টায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমের মধ্যেই আমার ভাইয়ের চতুর্থ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। তাকে ৪৫ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয় এবং টেম্পোরারি পেসমেকার (টিপিএম) বসানো হয়। দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে আমার ভাই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
তালা এলহেনদি বলেন, চিকিৎসা প্রক্রিয়ার সময় তাকে ওষুধ প্রয়োগ করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করেছেন ডা. কায়সার নাসির। কিন্তু আমার ভাইয়ের পরিবারের কাছে চিকিৎসার যে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে তার নাম পাওয়া যায়নি।
তালা এলহেনদি আরও বলেন, ফোনে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। ভোর ৪টা ৮ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা সময় পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময়ের মধ্যে তারা আমার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে পারতেন, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনের বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন এখানে>>>
এসএম