পুলিশ হতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের যে যোগ্যতা লাগবেই
বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই), সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে হলে নারীদের ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার হতে হবে। আগে এ উচ্চতার মানদণ্ড ছিল ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। আগামী এপ্রিল থেকে নতুন এ উচ্চতায় পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়াও পুলিশে পুরুষদের উচ্চতার মানদণ্ডও বাড়ানো হয়েছে। আগে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হলেই আবেদন করা যেত। সেই উচ্চতা এখন বাড়িয়ে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হচ্ছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পুলিশের ১৯৪৩ সালের প্রবিধানের নিয়োগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সেই সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় সচিব কমিটি। রোববার এ বিষয়ে সরকারি আদেশ প্রকাশ হতে পারে। এরপর নথিটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের ভেটিং শেষে কার্যকর হবে।
সংশোধনী প্রবিধানে নিয়োগ পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। পুলিশ হতে হলে দৈহিক মাপ, উচ্চতার পাশাপাশি মেধাবী হতে হবে। এছাড়াও পুলিশে ভর্তিচ্ছুক সবাইকে কম্পিউটারে দক্ষ হতে হবে। এছাড়াও তাদের কণ্ঠস্বর পরীক্ষা হবে। বিভিন্ন কৌশলে পরীক্ষা করা হবে তাদের পেশার প্রতি আগ্রহের বিষয়টি। আগামী এপ্রিল মাস থেকে নতুন এ পুলিশে নিয়োগ কার্যকর হতে পারে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পদ্ধতি যুগোপযোগীকরণের জন্য পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ এর সংশ্লিষ্ট প্রবিধান সংশোধনকরণ প্রসঙ্গে বলা হয়- পুরুষ প্রার্থীর উচ্চতা অবশ্যই ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, বুকের মাপের ক্ষেত্রে ৩১ ইঞ্চি সাধারণ ও বর্ধিতকরণ ৩৩ ইঞ্চি থাকতে হবে। কনস্টেবল নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আগে উচ্চতা নির্ধারিত ছিল ১ দশমিক ৫৮ মিটার বা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। সংশোধনীতে তা পাল্টে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি করা হয়েছে।
উচ্চতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে (পয়েন্ট স্কেল অনুসরণপূর্বক) প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং করে অধিক উচ্চতা সম্পন্ন এবং ভালো ফলাফল অর্জনকারী প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা নির্ধারণ করতে হবে। দৌড়, রোপ ক্লাইম্বিংয়ের পাশাপাশি হাইজাম্প, লং-জাম্প, পুশআপ, সিটআপ এবং ড্র্যাগিং অন্তর্ভুক্ত বা উত্তীর্ণ হওয়ার প্যারামিটার নির্ধারক।
এছাড়াও এসআই পদের আবেদনকারীর উচ্চতা বিবেচনায় ৪৫ শতাংশ, এসএসসি বা সমমানের ভালো ফলাফল বিবেচনায় ১৫ শতাংশ, এইচএসসি বা সমমানের ভালো ফলাফল বিবেচনায় ১৫ শতাংশ এবং ডিগ্রি অথবা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভালো ফলাফল বিবেচনায় অপর ২৫ শতাংশ নেওয়া হবে। পুলিশ সদর দপ্তর অটো স্ক্রিনিং করে যোগ্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। তবে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকৃত শূন্যপদের চেয়ে ৫ গুণের বেশি হবে না। এ তালিকার প্রার্থীদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।
সারা দেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এসপি পদের নিচে নয় এমন কর্মকর্তাদের দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করবে। যেখানে ১০০ নম্বরের পৃথক দুটি প্রশ্নপত্র থাকবে। পরীক্ষার জন্য সময় নির্ধারণ থাকবে ৩ ঘণ্টা। এতে ইংরেজি-বাংলা রচনা ছাড়াও সাধারণ জ্ঞান ও অঙ্ক থাকবে। এছাড়া ৫০ নম্বরের মানসিক পরীক্ষাও থাকছে। এসপি পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল শিট প্রস্তুত করে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
পুলিশ সদরদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, পুলিশের নিয়োগপদ্ধতিকে যুগোপযোগী করতে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিয়োগে কোনো তদবিরই কাজে আসবে না। বরং কেউ তদবির করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হবে। যারা মেধাবী ও যোগ্য তারাই পুলিশে কাজ করার সুযোগ পাবে।
এআর/এসএম