এক ভরি সোনা-এফজেড মোটরসাইকেল ফ্রি, তবু বিক্রি হয়নি কোটি টাকার খাট
এবারের বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল কোটি টাকা দামের একটি খাট। শুরু থেকেই খাটটি দর্শনার্থীদের নজর কাড়লেও মেলা প্রায় শেষ হতে এলেও এখনও বিক্রি হয়নি এই ‘পরী পালং খাট’। বিক্রেতা কোটি টাকা দাম হাঁকলেও ক্রেতাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫১ লাখ টাকা দাম উঠেছে।
আজ (শুক্রবার) রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) বাণিজ্য মেলায় খাটটির মালিকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাটটির ডিজাইনার ও মালিক মো. নুরুন্নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজকীয় কারুকাজ ও পরীর ডিজাইনে খাটটি তৈরি করা হয়েছে। কোনোরকম মেশিনের ব্যবহার ছাড়াই সর্বোচ্চ নৈপুণ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। খাটটির দাম এক কোটি টাকা চাইছি। যিনি খাটটি কিনবেন তাকে উপহার হিসেবে একটি ইয়ামাহার এফজেড মডেলের মোটরসাইকেল ও এক ভরি সোনার গহনা উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ দাম পাইনি। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
মেলায় স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, স্টলের সামনে একটি ব্যারিকেড দেওয়া আছে। ব্যারিকেডের কাছাকাছি থেকে খাটটি দেখছেন দর্শনার্থীরা। খাটের চার কোণে দাঁড়িয়ে আছে পরীর আদলে চারটি মূর্তি। বিভিন্ন অংশে আরও ১২টি পরী রয়েছে।
খাটটি সম্পর্কে জানতে চাইলে নুরুন্নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পরীর ডিজাইনে তৈরি করায় নাম দেওয়া হয়েছে পরী পালং খাট। এটি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় তৈরি। এতে মেশিনের ব্যবহার হয়নি, সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষত্ব হলো এর ডিজাইন কিংবা ক্যাটালগ বিশ্বের কোথাও নেই। সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা থেকে শখের বশে খাটের ডিজাইন করেছেন আমার ভাই। তৈরি করেছেন স্থানীয় কারিগর আবু বক্কর সিদ্দিক। ২০১৭ সালে তিনি ও তার এক সহকারী মিলে কাজ শুরু করেন। তিন বছর দুই মাসে কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা। কারিগরের মজুরিসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য মেলায় স্টল নেওয়াসহ নানা খরচ মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, খাটের চার কোণে বড় চারটি পরীর হাতে চারটি প্রজাপতি রয়েছে। এর পাশে চারটি চাঁদ ও ছয়টি সূর্যের নকশা আছে। বিভিন্ন অংশে রাজকীয় কারুকাজ রয়েছে। পাটাতনগুলো ভাঁজ করে তুলে রাখার ব্যবস্থা আছে। চট্টগ্রামের সেগুন কাঠের ফাইবার দিয়ে এটি তৈরি। প্রায় ২০০ ঘনফুট কাঠ থেকে ৮৫ ঘনফুট কাঠের ফাইবার বের করে খাটটি তৈরি করা হয়েছে।
মেলার সময় তো প্রায় শেষ পর্যায়ে, সর্বশেষ কত হলে খাটটি বিক্রি করবেন জানতে চাইল নুরুন্নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা একেবারেই আলোচনা সাপেক্ষে। আমরা এক কোটি টাকা চেয়েছি। কাছকাছি দাম হলে ছাড়বো। তবে সেটা একেবারেই আলোচনা সাপেক্ষে।
এদিকে খাটটি দেখতে অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে স্টলটির সামনে। কেউ সেলফি তুলছেন, আবার কেউ শুধু খাটের নানা প্রান্ত থেকে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টাও করেছেন। তবে মালিকপক্ষ ও বিক্রেতার নিষেধ থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না কারও। কেউ যাতে খাটের কাছে যেতে না পারেন, স্পর্শ করতে না পারেন, সেজন্য সার্বক্ষণিক দু’জন কর্মী স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন।
এমএইচএন/এনএফ