ইজতেমা : তসবিহ-আতরে ৬ লাখ টাকার ব্যবসার আশা ওবায়দুল্লাহর
দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু এর দুইদিন আগ থেকেই জমজমাট ইজতেমা এলাকার চারপাশ। মাঠের পাশেই খোলা জায়গায় সারিভাবে বসেছে নানা দোকানপাট। তসবিহ, জায়নামাজ, আতর, টুপি থেকে শুরু করে আছে শীত নিবারণের নানা কাপড়ও। ইজতেমা চলাকালীন সময়ে এসব বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয়ও করেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে টঙ্গী ইজতেমা মাঠের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা গেছে।
তসবিহ, টুপি, আতর বিক্রেতা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, অন্যান্য বছর ইজতেমার দিন থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও এবছর দুইদিন আগে থেকেই জমে উঠেছে। একদিন আগেই ইজতেমার মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আশা করছি এবার ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বেচাকেনা হবে।
ইজতেমা প্রাঙ্গণের অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা দুই দিন আগে থেকেই চলে এসেছি। শীতের রাতে আমরা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। সাধারণ মানুষ তো রাতে রাস্তায় বিছানা পেতে ঘুমায়। লোকজন তো আগামী দুইদিন আরও আসবে। সবমিলিয়ে পরে কী অবস্থা হবে বুঝতে পারছি না।
বরিশাল থেকে এসে পাঞ্জাবির কাপড় বিক্রি করছেন মো. আব্দুল হালিম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, গত দুই বছর ঢাকায় ইজতেমা হয়নি। এবছর আগামীকাল থেকে শুরু হবে। আমরা তিনদিন আগে থেকেই এসে অবস্থান নিয়েছি। ইজতেমা শুরুর আগেই যে পরিমাণ বেচাকেনা হচ্ছে, এতে আমরা খুবই খুশি।
ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, গতকাল ১২ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আজ আশা করছি ২৫-৩০ হাজার টাকা হবে। মালামাল এখনও পরিপূর্ণভাবে উঠাইনি। সবমিলিয়ে ইজতেমা শেষে এবার হাসিমুখেই ফিরতে পারবো।
বিক্রেতাদের পাশাপাশি কেনাকাটা করে খুশি ক্রেতারাও। তারা বলছেন, ইজতেমায় এসে কম মূল্যে ভালো জিনিস কেনা যায়। অন্যান্য দোকানগুলোতে সাধারণ জিনিসপত্রের যে দাম থাকে, ইজতেমা মাঠে সেটা অনেক কমে কেনা যায়।
এদিকে ইজতেমা শুরুর আগেই এর প্রভাব পড়েছে আশেপাশের সড়কগুলোতে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিমানবন্দর-উত্তরা হয়ে গাজীপুরগামী সড়কে যানবাহনের চাপে তীব্র যানজট দেখা দেয়। চাপ কমাতে দুপুর থেকে আন্তঃজেলা যানবাহনগুলো মহাখালী থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
ইজতেমার প্রভাব ছাড়াও গাজীপুর সড়কের একটি লেন বন্ধ থাকার কারণে শুধু উত্তরা-টঙ্গী সড়ক নয়, রাজধানীর মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মতিঝিল, গুলশান, মিরপুরের একাংশ ও তেজগাঁও এলাকার সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশকে। এমনকি তীব্র যানজটের কারণে সকালে থেকেই বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনার কারণে গত দু'বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার তাবলীগের এ মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আগেভাগেই উপস্থিত হচ্ছেন মুসল্লিরা। ময়দানে আসা মুসল্লিদের জমিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে প্রাথমিক বয়ান।
প্রায় এক বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তাবলীগের মুসল্লিদের জন্য জেলাওয়ারী আলাদা ৯১ ভাগে (খিত্তায়) ভাগ করা হয়েছে। শীত উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন।
টিআই/এমজে