পুলিশের দাবির বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়েছে বাহিনীটির পক্ষ থেকে। সেই দাবি পূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন টেলিকম অডিটোরিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ সদস্য মারা গেলে ক্ষতিপূরণ, যৌক্তিক দাবি। সিনিয়র সচিব এটার ব্যবস্থা নেবেন। আমরা মনে করি, সাইবার জগতটা আমাদের জন্য নতুন জগত। অপরাধীরা এই জায়গাটায় অত্যন্ত সক্রিয়। এই জায়গাটায় আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। আমাদের সাইবার ইউনিট আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি এসেছে। যত বেশি আমরা পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে পারব তত বেশি দক্ষ পুলিশ বাহিনী তৈরি হবে, এ দাবিটাও যৌক্তিক।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তর করার জন্য দাবি এসেছে। আপনাদের হাসপাতালটা একটা ভালো মানের হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। এটাকে আপনারা কলেজে রূপান্তরিত করতে চান। আপনারা বিষয়টা আরেকটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলবেন। কারণ আমাদের যে পরিমাণ মেডিকেল কলেজ আছে, কোনো কোনো মেডিকেল কলেজে তো শিক্ষকই নাই। এ বিষয়টা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের সচিব দেখবেন। প্রত্যেক বিভাগে একটা করে আধুনিক হাসপাতাল হবে, এটাও আমি যৌক্তিক দাবি মনে করি।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের যানবাহনের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের পুলিশের সব জায়গায় যাওয়া লাগে তাই যানবাহনের প্রয়োজন রয়েছে। যানবাহনের জন্য এবারও আমাদের বাজেট ছিল। অতিমারির ধকল যেতে না যেতেই রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যানবাহনে কড়াকড়ি আরোপ রয়েছে। আশা করছি, অচিরে এই সমস্যার সমাধান হবে এবং যানবাহনে পুলিশকে টপ প্রাইওরিটি দিতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদোন্নতি পুলিশ হেডকোয়ার্টার কর্তৃক সম্পাদন করার কথা বলা হয়েছে। এটাও আমাদের সচিব মহোদয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এটা কীভাবে আরও সুন্দর করা যায় এবং যুগোপযোগী করা যায়, কীভাবে আপনারা ভালো সেবা পান সেটা তিনি (সচিব) দেখবেন। মন্ত্রণালয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স নামটি ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে, এটা বলা যেতেই পারে, এখানে কোনো সমস্যা নেই। কেন বলা হয় না এটা আমি নিজেও জানি না। সিনিয়র সচিবকে বলব, আপনি এটার ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশে কর্মরত সিভিল স্টাফদের অবসরকালীন রেশন সুবিধা এটা অন্য বাহিনী পায় কি না আমরা চেক করে দেখব।
তিনি বলেন, আপনাদের যে দাবিগুলো মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সিনিয়র সচিব (পূরণ) করতে পারবেন এগুলো সচিব মহোদয় ইমিডিয়েটলি করে দেবেন। যেগুলো প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন সেগুলো পর্যায়ক্রমে এবং যেখানে যেটা প্রয়োজন আলোচনা করে আপনাদের যৌক্তিক দাবিগুলো রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করব।
মন্ত্রী আরও বলেন, আরেকটা দাবি আসছিল আমাদের আইজিপি মহোদয়কে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা দিতে, যেখানে আমরা বলছি সিনিয়র সচিব সেখানে তাকে সিনিয়র সচিব ঘোষণা দিতে বিলম্ব কেন আমার জানা নেই। সচিব মহোদয় আপনার কাছে রিকোয়েস্ট যেগুলো কনফার্ম রয়েছে সেগুলো যেন তারা দ্রুত ভোগ করতে পারেন সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। আপনাদের গতি যেন কমে না যায় সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি। আমরা যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
সভার শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পুলিশ পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাগজে কলমে পুলিশ অধিদপ্তর চায় না, পুলিশ হেডকোয়ার্টার হিসেবে লিখতে চান তারা। এছাড়া আইজিপির র্যাঙ্ক ব্যাচ ফোরস্টার করা, পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ করা, বঙ্গবন্ধু ইউনিভার্সিটি অব পুলিশ অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস নামে পুলিশের জন্য একটা বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন তারা।
এসময় সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এমএসি/এসএসএইচ/