দুদকের কার্যক্রমে ডিজিটাল ছোঁয়া
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশনের যাবতীয় কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগতে যাচ্ছে। এখন থেকে এ সংক্রান্ত কাজ ম্যানুয়ালের পরিবর্তে ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইপিএমএস) নামে আধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে করবে সংস্থাটি।
নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার (১ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে আইপিএমএসর। অভিযোগ থেকে শুরু করে প্রসিকিউশন কার্যক্রম পর্যন্ত সব কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। ফলে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে গতিশীল হবে বলেই মনে করছেন দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টেকে বলেন, দুদকের কার্যক্রমে আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে আইপিএমএস সফটওয়্যার যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস এর ফলে দুদকের কার্যক্রম গতিশীল ও সহজ হবে।
অন্যদিকে এমপিএমএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদক প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশন কার্যক্রম সব সময় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হয়ে আসছে। এতে অভিযোগ থেকে চার্জশিট, প্রতিটি ধাপে ধাপে আমলাতান্ত্রিক কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়তে হয়। ডিজিটাল সিস্টেম না থাকার কারণে একটি অভিযোগ দুদকেরই বিভিন্ন দপ্তর থেকে পৃথক পৃথক অনুসন্ধান ও তদন্ত করারও নজির রয়েছে। এমনকি একটি অভিযোগ দুদকে জমা হওয়ার পর তার শেষ পরিণতি সম্পর্কে জানতে অনেক টেবিল ঘুরে জানা লাগত। অনেক সময় অজানাও থাকার দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন : পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর হাতে আলাদিনের চেরাগ!
তিনি বলেন, নতুন ডিজিটাল সিস্টেম চালু হওয়ার পরে একটি অভিযোগ থেকে প্রসিকিউশন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ সংশ্লিষ্ট দপ্তর এক ক্লিকেই জানতে পারবে। নতুন সিস্টেমের মাধ্যমে অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরাসরি তার অনুসন্ধান বা তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে পারবেন। এমনকি অভিযোগকারী অভিযোগ জমা দেওয়ার পর দুদক কি কাজ করেছে তা খুব সহজেই জানতে পারবে। ফলে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে গতিশীল হওয়ার পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর হবে।
আরও পড়ুন : জাহালমের সেই ৩৩ মামলার চার্জশিট কতদূর
আইপিএমএস সফটওয়্যারটির প্রয়োগ মূলত দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুদকে জমা হওয়া দুর্নীতির অভিযোগ থেকে শুরু করে এগুলোর তদন্ত এবং এ সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ করা হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
আইপিএমএস যেভাবে কাজ করবে
দুদক সূত্রে জানা যায়, আইপিএমএস পদ্ধতিকে চারটি মডিউলে ভাগ করা হয়েছে। অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউল, অনুসন্ধান ম্যানেজমেন্ট মডিউল, তদন্ত ম্যানেজমেন্ট মডিউল এবং প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট মডিউল।
অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউল
দুদকে জমা হওয়া সব অভিযোগ নিবন্ধন ও নিবন্ধন করা অভিযোগ অনুমোদন সংক্রান্ত কাজ করতে অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউলটি কাজ করবে। বর্তমানে অভিযোগ নিবন্ধন ও নিবন্ধন করা অভিযোগ অনুমোদন সংক্রান্ত কাজগুলো ম্যানুয়ালি করা হয়, যা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউলটির দুটি অংশ। একটি অনলাইন ওয়েব পোর্টাল, অন্যটি ব্যাক অফিস ম্যানেজমেন্ট। অনলাইন ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন আর ম্যানুয়ালভাবে দাখিল করা অভিযোগগুলো ব্যাক অফিসের মাধ্যমে নিবন্ধিত হবে।
অনুসন্ধান ম্যানেজমেন্ট মডিউল
আইপিএমএসের মাধ্যমে দুর্নীতিসংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ গ্রহণ করার পর অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এরপর অভিযোগগুলো অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হবে। যেসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হবে, তা এই মডিউলে সংরক্ষিত থাকবে। অনুসন্ধানসংক্রান্ত সব কাজ অনুসন্ধান মডিউলের মাধ্যমে করা হবে।
তদন্ত ম্যানেজমেন্ট মডিউল
অনুসন্ধান শেষে যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হবে, তা তদন্ত মডিউলে থাকবে। তদন্তের সব তথ্য ও আলামত এই মডিউলে সংরক্ষণ করা হবে এবং তদন্তসংক্রান্ত সব কাজ তদন্ত মডিউলের মাধ্যমে শেষ করা হবে।
প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট মডিউল
দুদকের প্রসিকিউশন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট মডিউলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হলে তার জন্য আইনজীবী ও কোর্ট ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা, মামলার শুনানির তথ্যাবলি সংরক্ষণ, বিশেষ কারণে আইনজীবী ও কোর্ট ইন্সপেক্টর পরিবর্তন, আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কাজ করা, বিল দেওয়া ইত্যাদি কাজ সহজ ও নির্ভুলভাবে করতে এই মডিউলটি তৈরি করা হয়েছে।
আরএম/এসকেডি