তিন বছরে বড় বড় গাঁজার চালান ঢাকায় এনে বিক্রি করে সুরুজের চক্র
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ওয়ারি এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে দেড়শ কেজি গাঁজা ও একটি ট্রাক জব্দসহ ৬ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মাদক কারবারি চক্রের মূলহোতা মো. সুরুজ (২০), সহযোগী শিমুল (২৪), মো. শাহিন (২৪), মো. মিলন (২৮), মো. রয়েল (২৭) এবং আশরাফুল ইসলাম (২৮)।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ওয়ারি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩ এর একটি দল।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদক কারবারি চক্রটি ৩ বছর ধরে কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদকের সবচেয়ে বড় বড় চালান নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিলেন।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ মাদক কারবারি চক্রের মূলহোতা সুরুজ এবং তার প্রধান সহযোগী ট্রাক চালক রয়েল। দুজনের পরিকল্পনায় তাদের আরও ৪ জন সহযোগী বিভিন্ন সময় অবৈধ মাদকের চালান আনা-নেওয়া এবং বহনের কাজে সহায়তা করেন। অল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় তারা একটি মাদক কারবারি চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটি বিভিন্ন সময় অভিনব কায়দায় ভূয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে কুমিল্লাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক ও যাত্রীবাহী গাড়ির সাহায্যে অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজার চালান বহন করতেন। এরপর এগুলো নিজ হেফাজতে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করতেন তারা।
তিনি আরও বলেন, মূলহোতা সুরুজ পেশায় মূলত পিকআপ গাড়ির চালক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় পিকআপ চালাতেন। পরে ২০২০ সালে ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কে ট্রাকের হেলপারি শুরু করেন তিনি। তবে একপর্যায়ে তার পেশা আড়াল করে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সুরুজ। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে কৌশলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজা এনে তার পাঁচ সহযোগীসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এভাবে তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে মাদকের সবচেয়ে বড় চালানগুলো আনা-নেওয়ার মাধ্যমে জমজমাটভাবে মাদকের কারবারি চালিয়ে আসছিলেন।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চক্রের আরেক সহযোগী আশরাফুল পেশায় সিএনজি চালক। তিনি আগ থেকেই সিএনজি চালানোর আড়ালে মাদকের চালান বহন করতেন। একপর্যায়ে চক্রের মূলহোতা সুরুজের সাথে তার পরিচয় হওয়ার পর এ অপরাধ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি অধিক লাভের আশায় মাদকদ্রব্য চোরাচালানে শ্যালক মিলনকেও জড়ান তিনি। পরে মিলন ২০২১ সালে মাদকের চালান নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়। সেসময় দায়ের করা মামলায় মিলন ৫৪ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। তবে জামিনে মুক্তির পর একই পেশায় আবারও জড়িয়ে পড়েন তিনি।
চক্রের অপর দুই সহযোগী শিমুল ভাঙ্গাড়ী ব্যবসা এবং শাহিন ভ্যান চালকের পাশাপাশি অবৈধ মাদক বহন করতেন। পুরে সুরুজ এবং রয়েলের সঙ্গে তাদের পরিচয়ের পর মূলহোতা সুরুজের পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করতেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, র্যাব-৩ গাঁজা পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭২টি অভিযান পরিচালনা করে ৩ হাজার ৯০৩ কেজি গাঁজা উদ্ধারসহ ২৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও গত ১৩ ডিসেম্বর সাংবাদিক পরিচয়ে অবৈধ মাদক কারবারি চক্রের ৪ জন কুখ্যাত মাদক কারবারিকে ৫০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
জেইউ/এফকে