গ্রেনেড হামলা থেকে বিচারকরাও রক্ষা পাননি : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশে আদালতে বোমা মেরে বিচারক হত্যা করা হয়েছে, আইনজীবীকেও হত্যা করা হয়েছে। আমিই যে শুধু গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছি তা নয়, আমাদের বিচারকরাও এ থেকে রক্ষা পাননি। জামায়াত-বিএনপি যখন বিরোধী দলে তখন ঝালকাঠি ও গাজীপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমাবাজি সম্পর্কে আপনারা জানেন। সেই ঘটনার পর থেকে আমরা বিচারকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠান চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় প্রচেষ্টা ছিল সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। তাই তার আর্থিক ব্যবস্থাপনা যেটা আগে ছিল সরকারপ্রধানের হাতে, সেটা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিমকোর্টের হাতে হস্তান্তর করি। আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিই। বিধিমালা প্রণয়নের ব্যবস্থা করি। স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করি। জুডিশিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে নেই এটা খুব অবাককাণ্ড! আমি কিন্তু সেটাও তৈরি করে দিয়েছিলাম। আমাদের কোনো ড্রাফট উইং ছিল না। ড্রাফট উইংও তৈরি করে দিয়েছি। ১৯৯৬ সালে কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করত না। আমি প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে একটি কম্পিউটার কিনে প্রথম ড্রাফট উইং তৈরি করে দিয়েছিলাম। আর সেই সঙ্গে এ্যানেক্স ভবন তৈরি করে দিই।
সরকারপ্রধান বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। ১৯৭০ সালে নির্বাচিত প্রাদেশিক সদস্য এবং জাতীয় পরিষদের সব সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একটি কনস্টিটিউট অ্যাসেম্বল তৈরি করেন। সেখানেই তিনি একটি কমিটি করে দেন সংবিধান প্রণয়নের জন্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে আমরা পাই সংবিধান। জাতির পিতা চেয়েছিলেন সংবিধানের ভিত্তিতে জনগণের মৌলিক অধিকার অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে একটা উন্নত জীবন দান করবেন। সেভাবে তিনি একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের উন্নয়নে লেগে যান। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করে, সেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সকল আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে সকল বিধিবিধান তিনি তৈরি করে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) এদেশের মানুষের জন্য এতো ত্যাগ শিকার করলেন অথচ তাকেই হত্যা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রকৃত পক্ষে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকারীদের বিচার যাতে না হয় সেই মার্শাল ল দিয়ে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনিদের বিচারের হাত থেকে শুধু রেহাই দিয়েছিল তাই না, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। বাংলাদেশে শুরু হয় বিচারহীনতার কালচার। অথচ জাতির পিতা সব সময় চেয়েছেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, সেই হত্যাকারীরা যেন বিচার না হয় তার জন্য আইনও করা হয়।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী, প্রথমে মোশতাক, তারপর জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে। আমাদের আসতে দেয়নি, এবং আসতে দেবে না। রেহানার পাসপোর্ট টাও রিনিউ করে দেয়নি। আমরা রিফিউজি হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমার অবর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন আমাকে নির্বাচিত করে এবং দেশের জনগণের যখন বিপুল সাড়া পাই, আমি সিদ্ধান্ত নিই যেভাবে হোক আমি দেশে ফিরে আসব। আমার ছেলের বয়স তখন ১০, মেয়ের ৮ বছর। রেহানার তাদের দায়িত্ব নেয়। আমি একাই ফিরে আছি দেশে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদ যুদ্ধাপরাধী বা স্বাধীনতার বিরোধীদের দেওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থায় আমি ফিরে এসেছিলাম। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিচার চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। আমার অধিকার ছিল না মামলা করার। আমি চেষ্টা করেছি। কারণ, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। আমরা ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। সরকার গঠন করার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আমরা উদ্যোগ নিই। এই অধ্যাদেশ যাতে বাতিল না হয় বিরোধী দল সব সময় সক্রিয় ছিল। কোর্টে যখন আসে তখন সুপ্রিম কোর্ট এ অধ্যাদেশ বাতিল করার নির্দেশ দেয়। পার্লামেন্টে আমরা তা বাতিল করি। এরপরই আমরা বিচার কাজ শুরু করতে পারি।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এমএসআই/এসকেডি