কূটনীতিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান
ঢাকার বিদেশি মিশনগুলোতে দায়িত্বরত দূতদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন না করার পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট : মানবাধিকার প্রচার ও সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনার থেকে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।
মূলত মানবাধিকার দিবস নিয়ে বিদেশি ১৫ মিশনের দেওয়া বিবৃতির প্রসঙ্গ টানেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকার ১৫টি কূটনৈতিক মিশনের যৌথ বিবৃতি আমাদের নজরে এসেছে। এ প্রসঙ্গে আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই। আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও নীতির মূলে রয়েছে গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধ। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংগ্রাম করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেই যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক পথ থেকে জাতিকে লাইনচ্যুত না হতে হয় সেজন্য বাইরের কোনো চাপের কাছে মাথানত করবে না। আমি আজ পরিষ্কার করে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা এ মাটিতে গণতন্ত্র ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে কখনো হাল ছাড়বে না।
তিনি বলেন, আমি ঢাকার বিদেশি মিশনগুলোকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাব। আমি বলতে চাই, কারও দিকে আঙ্গুল তোলার আগে নিজেদের আয়নায় দেখে নিন। বাংলাদেশ সরকার বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে আন্তরিক।
বাংলাদেশ বাইরের কোনো চাপের কাছে মাথানত করবে না বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো বাইরের চাপের কাছে মাথানত করবে না। বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতার উৎস এ দেশের জনগণ। জনগণই নির্ধারণ করবে কে এ জাতিকে শাসন করবে। কোনো বাহ্যিক শক্তি বা কোনো অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র এটি নির্ধারণ করতে পারবে না।
৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশে অবস্থানরত ১৫টি পশ্চিমা দেশের দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এ দেশের সাফল্যকে আরও উৎসাহিত করতে আগ্রহী এবং মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৭৬টি গুম নিয়ে অভিযোগ করেছে। তার মধ্য থেকে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি অভিযোগ ২৮ বছরের পুরোনো, যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল না।
প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, বিলিয়ার পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল হান্নান, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির।
এনআই/এসএসএইচ/