নারী নেতৃত্ব ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিতের আহ্বান টিআইবির
সুশাসন নিশ্চিতে জেন্ডার সমতা ও সবক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব প্রদানের মতো অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। তাই নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন যেমন অসম্ভব, তেমনি নেতৃত্বে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ ছাড়া জেন্ডার সমতা ও সুশাসন নিশ্চিত করাও সম্ভব নয়। জেন্ডার অসমতা ও দুর্নীতি পরস্পর সম্পর্কিত। জেন্ডার অসমতা সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে বাধাগ্রস্ত করে। বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাহত হয়। যেসব দেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সাফল্যজনক, সেসব দেশ দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাফল্য পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রা অর্জনে ব্যাহত হচ্ছে। আবার দুর্নীতির কারণে পুরুষের তুলনায় নারীর ঝুঁকি বেশি।
টিআইবি পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপ-২০১৭ এর তথ্যমতে সেবাগ্রহণকারী হিসেবে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ নারী দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এছাড়া আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, নারীর ওপর সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্নীতির বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। নারী যেমন দুর্নীতির শিকার হয়, তেমনি নারী দুর্নীতির মাধ্যম ও সংঘটক হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দুর্নীতির কার্যকর প্রতিরোধে নারীর ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করে টিআইবি।
ড. জামান আরও বলেন, করোনা অতিমারি থেকে উত্তরণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানতালে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অনেক; সম্প্রতি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ অনুপ্রেরণাদায়ী নারী নেতৃত্বের স্বীকৃতি তারই প্রমাণ। কিন্তু এমন সময়েও নারীদের প্রতি সহিংসতা কিংবা নারীদের অবদমনের প্রক্রিয়া বন্ধ নেই।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড ১৯ অতিমারিকালে ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারীর দৈনন্দিন জীবনাচার নিয়ন্ত্রণ এবং ৩৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ নারী অর্থনৈতিকভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আর ৪৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ নারী শারীরিক ও যৌন উভয় ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি এসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় এবং পারিবারিক উপার্জন হ্রাস পাওয়ায় বাল্যবিবাহ এবং ঝরে পড়া নারী শিক্ষার্থীর হার বাড়ছে। অথচ টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে করণীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১ উপলক্ষে টিআইবি ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : কোভিড ১৯ সংকটকালে উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ড শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ন্যয়বিচার লাভ ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব নিশ্চিতে যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নারীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠায় অন্যতম প্রতিবন্ধক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার ও দুর্নীতি প্রতিরোধকে মূলধারাভুক্ত করতে হবে।
টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনায় অভীষ্ট-৫ ও ১৬-কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধের পূর্বশর্ত হিসেবে দুর্নীতি কমিয়ে আনাসহ সরকারকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে জাতীয় পরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫’ পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন করতে হবে; সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (সংশোধিত) আইন ২০০৯’ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাড়াতে হবে
কমিটিতে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে; দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায় এবং নারীর নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের আইনি বিধান ও সাজা সম্পর্কে নারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ইত্যাদি।
আরএম/আরএইচ