দুই জঙ্গি ছিনতাই : তদন্তে আরও সময় চায় কমিটি
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও সময় চাইবে। তদন্ত কাজ শেষ করতে তৃতীয় দফায় আরও অন্তত তিনদিন সময় চান কমিটির সদস্যরা।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পূর্ব নির্ধারিত সময় ছিল তিন কার্যদিবস। এর মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারায় আরও সাত দিন সময় নেয় কমিটি। দ্বিতীয় দফার নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর)। তবে এ সময়ের মধ্যেও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারছে না ডিএমপি গঠিত কমিটি।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আদালত থেকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং মো. আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের পলায়নের ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তারকে সভাপতি করে গঠিত তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স), যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি), উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-লালবাগ) ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিআরও)। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সময় লাগবে। আসামির পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। কমিটির একেক সদস্য একেক কাজ করছেন। সবমিলে নিজেরা একটি বৈঠক করে সব চূড়ান্ত করার পর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দিতে তৃতীয় দফায় আরও সময় চাইবে কমিটি।
উল্লেখ্য, গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে দুই জঙ্গিকে একটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মাস্টার মাইন্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার অনুমতিতে এই ছিনতাই অপারেশন পরিচালনা করেন সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান।
কারাগারে থাকা জঙ্গি আরাফাত ও সবুরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, কনডেম সেলে থাকা ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামিরা প্রায় মোবাইল ফোনে যোগযোগ করতেন। কারাগারে বসেই পরিকল্পনা হয় আসামি ছিনতাইয়ের।
প্রথমে ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো প্রিজন ভ্যানে হামলার করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে কাশিমপুর থেকে পুরান ঢাকায় আদালত পর্যন্ত আনা-নেওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে হামলা করাটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাদের।
তাই তুলনামূলক কম নিরাপত্তা থাকায় ছিনতাই অপারেশনের স্পট হিসেবে বেছে নেয় আদালত প্রাঙ্গণকে। আর অপারেশনের জঙ্গি সদস্যদের ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল সহযোগীরা।
জানা গেছে, ঘটনার পর তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ নভেম্বর) সিটিটিসির একাধিক টিম কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার পরিদর্শনে যায়। প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তারা কারাগার থেকে কার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে জঙ্গিরা বাইরে যোগাযোগ করেছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এই অপারেশনে তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীসহ সবাইকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি।
জেইউ/এসকেডি