আইডিআরএ চেয়ারম্যানের ঘুষ দাবির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আনা ঘুষ দাবির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৪ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রোববার (৭ মার্চ) কমিশন থেকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুদক উপপরিচালক নুরুল হুদাকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে দুদকের জনসংযোগ দপ্তর।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছিল বলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ অসত্য ও বানোয়াট দাবি করে দুদকের কাছে প্রত্যাহারের আবেদন জানায় ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
ঘুষের অভিযোগ কেন হয়েছিল, আবার তা কেন প্রত্যাহার চাওয়া হল- প্রশ্ন রেখে ২২ ফেব্রুয়ারি দুদক সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, দুদক আইনে অভিযোগ প্রত্যাহারের সুযোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে অভিযোগ যদি সুস্পষ্ট থাকে তাহলে তদন্ত শুরু হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যাহারের আবেদন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যাবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা খতিয়ে দেখবেন, কেন অভিযোগ করা হয়েছিল, আবার কী কারণে তা প্রত্যাহার চাওয়া হল।
এর আগে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পর্ষদ কমিটির সভা থেকে প্রতিষ্ঠানটির জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পল্লব ভৌমিককে অভিযোগ করতে বলা হয়েছিল। পর আবার তার উদ্দেশে লেখা চিঠিতেই অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলা হয়।
ডেল্টা লাইফের প্রশাসক সুলতানুল আবেদীন মোল্লার সই করা চিঠিতে বলা হয়, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি পর্ষদ সভায় বিবিধ এজেন্ডার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার উৎকোচ (ঘুষ) দাবির অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করার জন্য দুদক চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিলের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছিল। ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে আপনি (পল্লব ভৌমিক) তা দাখিল করেছিলেন। এখন আপনার দাখিল করা অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য এ সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছিল বলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান প্রথমে দুই কোটি টাকা, পরে এক কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা ‘উৎকোচ’ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান বলেন, ঘুষের তথ্য তুলে ধরায় প্রতারণার অভিযোগ তুলে ২০০ ধারায় ডেল্টা লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৭ জানুয়ারি মামলা করেছে আইডিআরএ।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় সমাধানের জন্য আইডিআরএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি কোম্পানির কাছে প্রথমে দুই কোটি, পরবর্তীতে এক কোটি ও সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ও ট্রান্সক্রিপটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ আকারে দাখিল করা হয়েছে। যা বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগ অধিকতর তদন্ত করার আদেশ দিয়েছেন। আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের কারণে ডেল্টা লাইফ কোম্পানির বিষয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এ হয়রানি বন্ধ করে আইডিআরএর দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান বলেন, আইডিআরএ চেয়ারম্যান আমাদের কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন। আমরা ঘুষ না দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রথমে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বাসায় ঘুষ নিয়ে আলোচনা হয়। পরে মোবাইল ফোনে আমাদের এক কর্মকর্তার কাছে ঘুষ চেয়েছেন তিনি। আমাদের কাছে এর রেকর্ড রয়েছে। এগুলো আমরা দুদকে দিয়েছি।
আরএম/আরএইচ