২ হাজার ‘এজেন্ট সিম’-এ মাসে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে একাধিক চক্র। এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে।
শুধু তাই নয়, এমএফএসের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন করেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
২১ নভেম্বর রাতে কুমিল্লা ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে এমন একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
চক্রের গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যরা হলেন- মীর মো. কামরুল হাসান শিশির (২৮), খোরশেদ আলম (৩৪), মো. ইব্রাহিম খলিল (৩৪), কাজী শাহ নেওয়াজ (৪৬), মো. আজিজুল হক তালুকদার (৪২) ও মো. নিজাম উদ্দিন (৩৫)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
সিআইডি প্রধান বলেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দেশে না পাঠিয়ে ওই বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে।
প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএসের এজেন্টকে প্রদান করে।
তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএসের এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএসের নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।
চক্র দুটি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ-ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে।
সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া আরও বলেন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ জেএ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক দুটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে, যার মাধ্যমে গত ৬ মাসে ৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়।
এ দুটি সিম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এরকম আরও ১১টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি। যাদের মাধ্যমে এরকম সন্দেহজনক তথা ডিজিটাল হুন্ডির তথ্য পাওয়া যায়।
২ হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ, নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে শেষ করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, 'ফ্রিডমফ্লেক্সি২৪ডটকম' এমন একটি সফটওয়্যার যার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশে যে নম্বরগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিতো এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশি হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত।
সিআইডি প্রধান বলেন, এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থানীয় সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচা, মাদক কেনা-বেচা, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির প্রধান বলেন, সব মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের আওতায় অনেক ডিস্টিবিউশন হাউজ রয়েছে। এ ডিস্টিবিউশন হাউজের মালিক ও কর্মচারী তাদের উচিৎ অধীনস্ত যে সব এজেন্টগুলো আছে তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা। যদি মনিটরিং না করে তাহলে তারা আইনের আওতায় আসবে।
পাশাপাশি বিকাশ, রকেট ও নগদের কর্তৃপক্ষ যারা ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ অনুমোদন দিয়েছে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ অবশ্যই মনিটরিং করবে। তারা যদি মনিটরিং না করে তাহলে আমরা বাধ্য হবো তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য। প্রবাসীরা যেন তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলের পাঠায়। সেক্ষেত্রে দেশের উন্নতি হবে ও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে না।
জেইউ/এসএম