‘রেকি’ করে চাবি ও অ্যান্টিকাটার নিয়ে এসেছিল জঙ্গিরা
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েকদিন রেকি করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নিতে আসে আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা। ঘটনাস্থল থেকে হাতকড়া কাটার অ্যান্টিকাটার, চাবি ও পিপার স্প্রে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, আনসার আল ইসলাম কখনো রেকি ছাড়া, পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া কিছু করে না। এখানেও তারা রেকি করেছে বলেই মনে হচ্ছে। যেখান থেকে দুই আসামি ছিনতাই করা হয়েছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, এটা হয়ত তারা জানত।
একটি মোটরসাইকেলসহ জঙ্গিদের ফেলে যাওয়া অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করার পর এমন ধারণা করছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।
রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে আসা জঙ্গিরা ২ আসামিকে ছিনিয়ে নেয়।
ছিনিয়ে নেওয়া আসামিরা হলো, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম এবং লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। তারা জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তাদের গ্রেপ্তারে ইতোমধ্যে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সশস্ত্র হামলায় বিশ্বাসী আনসার আল ইসলাম। একটি সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় আজ ১২ আসামীকে কোর্টে তোলা হয়। তাদের মধ্যে চার জঙ্গি ছিলেন আনসার আল ইসলামের সশস্ত্র টিমের সদস্য। যারা প্রকাশক দীপন ও লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, চারজন চারজন করে আসামিদের কোর্ট থেকে গারদে নেয়া হচ্ছিল। প্রথম চারজনের মধ্যে ছিল জঙ্গি সদস্য আরাফাত, সবুর, মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব।
তখনই অতর্কিতভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে ছিনিয়ে নিতে আসা অন্য জঙ্গিরা। তারা রাস্তার বিপরীতে মোটরসাইকেল পার্ক করে দাঁড়িয়ে ছিল৷ গেটে আসা মাত্র পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে অজ্ঞান করা হয় পুলিশ সদস্য, গেটম্যান ও তিন চালককে। এরপর পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মেরে একটি বাইকে দুই জঙ্গিকে তুলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তারা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ছিনিয়ে নিতে আসা জঙ্গিরা পলায়নের রুটম্যাপ ও ব্যাকআপ নিয়েই ঘটনাস্থলে এসেছিল। তারা জানত, এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ধারণা করা হচ্ছে তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল। একাধিক জঙ্গি সদস্য এই ছিনিয়ে নেয়ার অপারেশনে যুক্ত ছিল। সঙ্গে আনা কাঁধব্যাগে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রও আনা হয়ে থাকতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিসহ জড়িতদের খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছে ডিএমপি, ডিবি, সিটিটিসিসহ বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট।
তিনি বলেন, ঘটনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিটিটিসি অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা আশা করছি, তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। কীভাবে জঙ্গিরা পালিয়ে গেল, কারা কীভাবে নিয়ে গেল, এগুলো দেখছি। তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সিটিটিসির আরেক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, জঙ্গিদের যাওয়ার পথ ধরে ধরে কয়েকটি টিম কাজ করছে। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে নানামুখী তৎপরতা চলছে।
জেইউ/জেএস