জিসিসির সঙ্গে অংশীদারিত্ব সংলাপ সংক্রান্ত এমওইউ সই বাংলাদেশের
বাংলাদেশের সঙ্গে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সহযোগিতার বিষয়ে অংশীদারিত্ব সংলাপ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জিসিসির পক্ষে সংস্থাটির মহাসচিব ড. নায়েফ ফালাহ এম আল-হাজরাফ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে জিসিসিভুক্ত দেশগুলো ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন দ্বার উম্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মোমেন বলেন, প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী জিসিসিভুক্ত দেশে কর্মরত রয়েছে, যারা জিসিসি ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। এ সব দেশে আরও বেশি দক্ষ অভিবাসী কর্মী নিয়োগের আরও সুযোগ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস। তবে মানি লন্ডারিং বা অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণ বাংলাদেশ ও জিসিসি দেশগুলোর অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। মানি লন্ডারিং ও অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণ বন্ধ করার বিষয়ে জিসিসির সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, জিসিসি দেশগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি যোগানদাতা অঞ্চল এবং বিশ্ব রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জিসিসিভুক্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি জ্বালানি নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির বিষয়ে মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন।
মোমেন বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা সব দেশের জন্য একটি অভিন্ন অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক এবং আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ জিসিসি সদস্য দেশ ও বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করতে ইচ্ছুক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জিসিসির বাজারে বাংলাদেশের মানসম্মন্ন পণ্যের রপ্তানি আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় জিসিসির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার কথা বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।
ড. মোমেন বাংলাদেশ-জিসিসি সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার আশা প্রকাশ করেন এবং এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করেন।
জিসিসি মহাসচিব সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের জন্য তার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সমঝোতা স্মারকটি দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন সেক্টরে যৌথ কর্মপরিকল্পনা, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং টেকনিক্যাল টিম, যৌথ বিজনেস কাউন্সিল গঠনের সুযোগ তৈরি ও সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে আইনি কাঠামো হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ জিসিসি সদস্য দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ এই সমস্যার কারণ এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে জিসিসি সচিবালয়ের সহায়তা প্রত্যাশা করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিসিসি মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে জিসিসি মহাসচিব তা সাদরে গ্রহণ করেন।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. নজরুল ইসলাম ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনআই/এসএম