জট খুলতে পারে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত বিশেষ এনআইডি’র
দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত এনআইডি কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজকের বৈঠকেই বিশেষ এই এনআইডির আটকে থাকা জট খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
এর আগে, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কার্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু হুদা কমিশন বিদায়ের পর এ কার্যক্রম বন্ধ রাখে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। বন্ধ থাকা এই কার্যক্রমটি নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বৈঠক বসতে করবে ইসি। ইসির সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় বৈঠকটি শুরু হবে।
এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৫ নভেম্বর বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজন করা হয়েছে। ওই সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
>>প্রথম দিনে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্টকার্ড পেলেন যারা
ইসি কর্মকর্তারা জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করার লক্ষ্যে মর্যাদা পূর্ণ ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করেছিল নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশেষ এই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রাধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ দেশের ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এই বিশেষায়িত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে কর্মসূচিটির উদ্বোধন করা হয়।
ইসি জানায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন “বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা সংবলিত বিশেষ স্মার্টকার্ড প্রদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংগ্রহ করে অনুমোদিত তালিকার ভিত্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হবে। বর্তমানে দেশে গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬০ জন। যেসব মুক্তিযোদ্ধা পূর্বে স্মার্টকার্ড পেয়েছেন তাদেরও পর্যায়ক্রমে এই বিশেষ মর্যাদা পূর্ণ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করার কথা ছিল।
এনআইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গতবছরের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ এই স্মার্টকার্ডের নকশা তৈরি করতে সাত সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশ ও পরামর্শ অনুযায়ী স্মার্টকার্ডের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী বর্তমান স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের অবয়ব ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত রেখে চিপের ঠিক নিচে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা থাকবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ পদবী সংযুক্ত করে চূড়ান্ত নমুনা প্রস্তুত করে বিশ্লেষণপূর্বক বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়। যাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নষ্ট না হয়। এছাড়া, স্মার্টকার্ডে তিন স্তর বিশিষ্ট ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া কার্ডে এই ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথম স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য খালি চোখে দেখা গেলেও দ্বিতীয় স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ যন্ত্রের। অন্যদিকে, ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্ট এর মাধ্যমে শেষ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয়ে থাকে। ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দযুগল সংযোজনের ফলে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেখা/পড়া এবং যাচাই যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি স্মার্টকার্ড এবং ডাটাবেজে সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত থাকবে বলে হুদা কমিশন জানিয়েছিল।
এসআর/এমএ