‘পরিকল্পিত হত্যা’ নাকি অন্য কারণ : তদন্তে মাঠে পুলিশ-র্যাব
নিখোঁজ থাকা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ফারদিন পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু- সেই রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব। নিখোঁজ ও পরে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ফারদিনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ইতোমধ্যে বন্ধু-বান্ধবিসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগে রামপুর এলাকায় তার এক বান্ধবী আমাত উল্লাহ বুশরাকে বাসায় যাওয়ার জন্য নামিয়ে দেয়। তারপর থেকেই নিখোঁজ হয় ফারদিন। এ ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে ধারণা পরিবারের।
সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের পেছনে নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকার কাজী নুর উদ্দিনের ছেলে ফারদিন। পরিবারের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জেরে ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের পিতা কাজী নুর উদ্দিন সপরিবারে রাজধানীর ডেমরার কোণাপাড়া শান্তিবাগ এলাকায় বসবাস করতেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।
নিহতের পরিবার ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর ফারদিন নূর নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় তার বাবা রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
>>মৈনট ঘাটে নিখোঁজ বুয়েট শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
নিখোঁজের দিন ফারদিন নূর কোণাপাড়ার বাসা থেকে বুয়েট আবাসিক হলের উদ্দেশে বের হয়ে যান। শনিবার পরীক্ষা দিয়ে আবার কোণাপাড়ার বাসায় ফিরে আসার কথা থাকলেও তিনি আর ফেরেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়ায়। সহপাঠীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ওই পরীক্ষায় অংশ নেননি। এর পর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করে সন্ধান না পাওয়ায় থানায় অভিযোগ করে পরিবার।
ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেকে কেউ হত্যা করে থাকতে পারে। তার মরদেহ পচে ফুলে গেছে। আমার ধারণা, তাকে শুক্রবার হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ সঙ্গেই পাওয়া গেছে। আমার ছেলে খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ডিবেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আগামী মাসে স্পেনের মাদ্রিদে একটি ডিবেটিং অনুষ্ঠানে তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। আমি এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফারদিনের মোবাইল ফোনের লোকেশন চেক করে দেখা গেছে, গতকাল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিচরণ। তবে তা ফারহানসহ নাকি ফারহান ছাড়াই তার মোবাইল অন্য কেউ ক্যারি করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষ।
তিনি বলেন, ফারহানের নিখোঁজের ঘটনায় রামপুরা থানায় জিডি করেছেন বাবা। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ফারদিনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থীর নিখোঁজের খবরে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে র্যাব। মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে র্যাবের একাধিক টিম।
জেইউ/এমএ